মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান করেন ঠিকাদারি! অভিযোগ দায়সারা ভাবে চলে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

বর্তমান সময়ে একটি আলোচিত ও সমালোচিত নাম বানাজা বেগম নিঁশি। যিনি কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। এই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে একই পরিষদে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি ঠিকাদারি কাজ সম্পন্ন করেছেন।

একমাত্র মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের প্রভাব খাঁটিয়ে ‘উপজেলা পরিষদ আইন’ লঙ্ঘন করে লাখ লাখ টাকার এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করে সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এতে স্থানীয় অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স নিসাম কন্সট্রাকশন ফার্ম লাইসেন্সের স্বত্তাধিকারী বানাজা বেগম। এ নামে তার ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট টিন নং-৮৪৯২৪৮৮১৩৫৫৪, ইউসিবিএল-কেএফবি/২০২০/১১৪নং স্মারকে ব্যাংক ম্যানেজার কতৃক একাউন্ট ও এলজিইডি অফিসের প্রত্যয়নপত্র নং-১৯-৬৮ এবং চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ ট্রেড লাইসেন্স ক্রমিক নং-২০৬৯ এর ছায়া কপি প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে।

ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়াও দলীয় পরিচয় কর্ণফুলী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা। যিনি দাপট দেখিয়ে হাতিয়ে নেন উপজেলার বড় বড় সড়কের কাজ। এমনকি কোন ঠিকাদার ওর এলাকায় কাজ পেলেও তার রোষানলে সে কাজ করতে পারেন না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারদলীয় এই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানাজা বেগম কোনো ধরণের নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই স্থানীয় উন্নয়নমূলক প্রকল্পে দায়সারা ভাবে সড়ক নির্মাণ কাজ করে চলেছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিজেই কাজের ঠিকাদার। নিজের নামেই ঠিকাদারি লাইসেন্স। এত অনিয়ম চললেও তার এমন দূর্ব্যবহারের কারণে এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার কাজে গিয়ে কাজের তদারকি করতেও পারেন না। করলেও নানা বকা শুনতে হয়। নাহয় মন্ত্রীর ভয় দেখান।

আরও অভিযোগে রয়েছে, কোন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিজ এলাকায় নিজের নামে কিংবা অংশীদার হিসেবে ঠিকাদারি করার বিধান না থাকলেও কর্ণফুলী উপজেলায় সড়ক উন্নয়নের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্পের কাজ করছেন। অথচ উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ সনের ২৪ নং আইনে রয়েছে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের অযোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবেন, তখন উপধারা (ঝ) তে রয়েছে তাহার পরিবারের কোন সদস্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত হন বা ইহার জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন বা উপজেলার কোন বিষয়ে তাঁহার (মানে উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান) কোন প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকে; ব্যাখ্যা।−দফা (ঝ) এর উদ্দেশ্য সাধনকল্পে ‘‘পরিবার’’ অর্থে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল তাহার পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে বুঝাইবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসের এক মো. ইন্জিনিয়ার জানান, কোন জনপ্রতিনিধি নিজ এলাকায় ‍নিজ নামীয় ঠিকাদারি ফার্ম এর লাইসেন্স দিয়ে ঠিকাদারি কাজ করতে পারেন না। এবিষয়ে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।

সদ্য বিদায়ী কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন জানান,‘এবিষয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারব না। কারণ আমি বদলি হয়ে অন্যত্রে চলে এলাম। আপনি নতুন ইউএনও জয়েন করলে উনার সাথে কথা বলেন।’

মেসার্স নিসাম কন্সট্রাকশন ফার্ম নিজের কিনা জানতে চাইলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানাজা বেগম প্রথমে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করলেও পরে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বলেন, ‘মেসার্স নিসাম কন্সট্রাকশন ফার্ম আমার হলেও মালিক কিন্তু আমার ভাই আকবর আলী। যা আদৌও কাগজে কলমে সত্য নয় বলে অনুসন্ধানে দেখতে পাওয়া যায়।

কোন জনপ্রতিনিধি নিজ নামে কিংবা আত্বীয়দের নামীয় লাইসেন্স দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঠিকাদার কাজ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. মামুন উল হক জানান, ‘স্থানীয় সরকার আইনে ও উপজেলা পরিষদের ম্যানুয়াল অনুযায়ি কোন জনপ্রতিনিধি নিজ নামে উপজেলার কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদারি কাজ করতে পারেন না। করলে চেয়ারম্যান হিসেবে অযোগ্য হবেন ।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই (রবিবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় কর্ণফুলী উপজেলা এলজিইডি অফিসে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্বামী হিসাবরক্ষককে মারধর করে রুমের সরকারি জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন।

পরেরদিন কর্ণফুলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার জিআর মামলা নং-৩০/২৫১। তারিখ ২৭-০৭-২০২০ইং। এরপূর্বে কর্ণফুলী থানার সাবেক এসআই বেলাল হোসাইনকে গালিগালাজ করার অপরাধে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই আবারও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মোস্তাফিজের হাতাহাতি ঘটনা ঘটেছিল। এরপর মোটর চালিত অটো রিক্সার এক ড্রাইভারকে আটক করায় তিনি ও তার স্বামী লোকজন নিয়ে কর্ণফুলী থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর করেন।