আজ পবিত্র ঈদুল আজহা

এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদুল ফিতরের মতো এবারও ঈদগাহ মাঠ বা উন্মুক্ত স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশের মসজিদগুলোতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ঈদের নামাজ পড়তে হবে। নামাজ শেষে কারও সঙ্গে কোলাকুলি বা হাত মেলানো যাবে না।

করোনার সময় উদযাপিত গত ঈদুল ফিতরের মতো অনেকেই এবারের ঈদুল আজহাকেও ঘরবন্দি মানুষের ঈদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ ঈদের আনন্দ বলতে যা বোঝায় তার অনেক কিছুই এবার করা যাবে না করোনা পরিস্থিতির কারণে। তবে মহামারীর কারণে আনন্দ কিছুটা কম হলেও সারা দেশে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। কিন্তু এ আমেজ পুরোপুরি উধাও দেশের বন্যাকবলিত ৩১ জেলায়। ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লক্ষাধিক মানুষ। এক মাসেরও অধিক সময় এসব জেলার মানুষ বানের পানিতে ভাসছে। এর ওপর শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। এতে চোখের পলকে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে নদীতীরের মানুষ। ইতোমধ্যে রাজধানীর আশপাশের এলাকাতেও প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলেই থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তারপরও রাজধানী ঢাকা বা দেশের অন্য এলাকায় যারা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে থাকেন, তারা অনেকেই কষ্ট ভোগ করে বরাবরের মতো গ্রামের বাড়ি গেছেন। কিন্তু এই ঈদযাত্রায় অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক পরছেন না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। ফলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, দেশে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬৬১ জনে। এর মধ্যে মারা গেছে তিন হাজার ১১১ জন এবং সুস্থ হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৯৬০ জন। বাকিরা এখনো করোনা আক্রান্ত হিসেবেই আছে, যাদের মধ্যে হাসপাতালে আছে চার হাজারের বেশি মানুষ। অন্য আক্রান্তরা বাসায় অবস্থান করছে। আগের মতো আতঙ্ক না থাকলেও তাদের ঘরে ঈদ উদযাপনের আয়োজন না থাকাই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের কাছে এবারের ঈদ আনন্দ আরো ফিকে হয়ে গেছে। নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে, কেউ বা আশ্রয় নিয়েছে বেড়িবাঁধের কাদাপানিতে। সেখানে তারা ঝুপড়ি বানিয়ে পার করছে দুর্যোগের সময়। আবার অনেকে বানের পানিতে হাবুডুবু খেয়েও নিজ নিজ ঘরে আটকে আছে। এসব মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ বলতে কিছুই নেই। তারা এখন ত্রাণের অপেক্ষায় থাকে সব সময়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিত জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ। বন্যাকবলিত উপজেলার সংখ্যা ১৫০টি এবং ইউনিয়নের সংখ্যা ৯৩৬টি। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১০ লাখ ৪০ হাজার ২৬৬টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৩ জন। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৫৪৮টি।  আশ্রয় নেওয়াদের সংখ্যা ৭৩ হাজার ১৭৩ জন। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে ৮৯৩টি এবং বর্তমানে চালু আছে ৩৭২টি। মানুষের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৩০১টি।

এদিকে আজ সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার ঈদগাহের পরিবর্তে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে ঈদের জামাত। ফলে রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের জাতীয় ঈদগাহেও ঈদের প্রধান জামাত হবে না। কেন্দ্রীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে ঈদের ৬টি জামাত। কেবল জাতীয় ঈদগাহ নয়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের যে কোনো ঈদগাহ কিংবা খোলা ময়দানে ঈদের জামাতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরিবর্তে মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে বলেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রেও ১৩ দফা শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

জাতীয় ঈদগাহে যেহেতু এবার ঈদের প্রধান জামাত হ‌বে না। তাই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এক‌টি জামাত বা‌ড়ি‌য়ে মোট ছয়টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হ‌বে। এর আগে বায়তুল মোকারর‌মে পাঁচ‌টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হতো। বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ‌্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ছয়টি ঈদ জামাত হবে। সকাল ৭টায় হবে প্রথম জামাত। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হবে দ্বিতীয় জামাত। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে হবে তৃতীয় জামাত। চতুর্থ জামাত হবে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে। পঞ্চম জামাত হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। ষষ্ঠ ও সর্বশেষ জামাত হবে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে।

এছাড়া রাজধানী ঢাকায় সরকারি আলিয়া মাদরাসা, ঢাকা মসজিদ এবং ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। পুরান ঢাকার বংশাল বড় মসজিদ, নিমতলী ছাতা জামে মসজিদ, তারা মসজিদ, নাজিরা বাজার আহলে হাদিস মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সকাল সাড়ে ৮টায় দুটি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। চকবাজার জামে মসজিদ, যাত্রাবাড়ী মারকাজ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং লাল শাহী মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ হবে। ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সকাল ৯টায়, ধানমন্ডির বায়তুল আমান মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সাড়ে ৮টায় দুটি করে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে সকাল ৬টা, সকাল ৮টা এবং সকাল ১০টায় ঈদের তিনটি জামাত হবে। এছাড়া মিরপুর কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তিনটি জামাত হবে সকাল ৭টায়, সকাল ৮টায় এবং ৮টা ৪৫ মিনিটে।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানেও ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে একই কারণে এই ময়দানে গত ঈদুল ফিতরের জামাতও অনুষ্ঠিত হয়নি।

এছাড়া দেশের সাত বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা ও গ্রামেও এবার সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগীয় ও শিল্প নগরী খুলনা টাউন জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। বরিশাল বিভাগীয় শহরে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদে সকাল ৮টায়। এছাড়া নগরীর কালেক্টরেট জামে মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় এবং তৃতীয় ও শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগীয় শহর রংপুরের কোট কাচারি বাজার মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এছাড়া রংপুর কেরামতিয়া জামে মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে। দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এছাড়া নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে সকাল ৮টায় প্রথম এবং পৌনে ৯টায় দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মসজিদগুলোতে মসজিদ কমিটির তত্ত্বাবধানে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হবে। সিলেট মহানগর এলাকায় হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে ঈদের ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৮টা ও সাড়ে ৯টায়। হজরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার মসজিদে একটি ঈদের জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। বন্দর বাজারের কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে ৪টি ঈদ জামাত। এগুলো হবে সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা ও ১০টায়। একই এলাকায় কালেক্টরেট জামে মসজিদে ২টি ঈদের জামায়াত হবে। সকাল সাড়ে ৮টা ও সাড়ে ৯টায়। সিলেট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ঈদের একটি জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এছাড়া রাজশাহী নগরীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) দরগাহ মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়।এখানে ঈদের দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। এছাড়া নগরীর রানীবাজার জামে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে। বিভাগীয় এসব মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ সরকারের উধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

আজ থেকে চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কৃপায় ও অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কোরবানি করে থাকে। উদ্দেশ্য আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা। এই ঈদের পর দুই দিন পর্যন্ত (১১ ও ১২ জিলহজ) পশু কোরবানি করার ধর্মীয় বিধান রয়েছে।