যশোর শিক্ষাবোর্ডের সফটওয়্যার কেনার কারসাজি, ফলাফল জালিয়াতির শংকা

চেয়ারম্যানের ক্ষমতার উৎস কি??

যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এবার পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সম্পন্ন করতে সফটওয়্যার তৈরি করার কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করে একটি কোম্পানির মাধ্যমে এই সফটওয়্যার তৈরি করার অপচেষ্টা শুরু করেছেন। সফটওয়্যার তৈরির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চেয়ারম্যান যেটি করার কারসাজি করছেন সেই সফটওয়্যার তৈরি করতে কোটি টাকার বেশি খরচ দেখানো হতে পারে। বিষয়টি পরীক্ষা বিভাগের হলেও সেখানকার কোনো কর্মকর্তার মতামত নেওয়া হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, সফটওয়্যার তৈরির নামে চেয়ারম্যান লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন।

অনলাইন সফটওয়্যার তৈরি করে কোটি টাকা সাশ্রয় করার কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেন। তিনি যোগদানের পর থেকে নতুন নতুন নামে নানা ধরনের কাজ করছেন। যার বাস্তবে কোনো সুফল নেই। তিনি এসব করে একের পর এক অর্থ হাতানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন স্কুল কলেজে তার উদ্যোগ নেওয়া অনলাইন সফটওয়্যারের কাজে ব্যবহার করতে স্ক্যানার কেনার জন্যে ৮০ লাখ টাকার চেক বিতরণ করেছেন। স্কুল কলেজ প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বোর্ডে প্রোগ্রামার এবং সফটওয়্যার ডেভেলপার থাকা সত্ত্বেও বাইরের কোম্পানিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে চুক্তি করতে যাওয়ার উদ্দেশ্য কী-এ প্রশ্ন এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাবোর্ড এখনো পর্যন্ত এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করেনি। সফটওয়্যারটি পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল তৈরির কাজে ব্যবহার হওয়ায় রীতিমতো ঝুঁকি রয়েছে বলে শিক্ষাবোর্ডের সাবেক একজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল এদিক-সেদিক করা সম্ভব। কেবল তাই না, ফলাফল জালিয়াতি এবং তথ্যগত ভুল হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া, সফটওয়্যারটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে ফলাফল সংক্রান্ত ডাটা সংগ্রহ এবং প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমে একটি কেন্দ্রের পরীক্ষার ডাটা সংগ্রহ করে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রোসেস করে অভিজ্ঞ সফটওয়্যার ডেভেলপার দিয়ে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেন একক সিদ্ধান্তে ৮০ লাখ টাকা স্ক্যানার কিনতে দেওয়া সরকারি টাকা অপচয়ের শামিল। বিষয়টি পরীক্ষা বিভাগের থাকলেও চেয়ারম্যান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে নামমাত্র সদস্য বানিয়ে নিজেই সবকিছু করছেন।

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, ৩০-৪০ হাজার টাকা মূল্যের যে স্ক্যানার বাজারে রয়েছে তা দিয়ে পরীক্ষার ডাটা দীর্ঘ সময় ধরে প্রোসেসের কাজ করা সম্ভব না। কারণ এ ধরনের স্ক্যানারে একটি বা দু’টি পরীক্ষার ডাটা স্ক্যান করার পর অকেজো হয়ে পড়বে। তখন আবার নতুন স্ক্যানার কিনতে হবে। এই ধরনের কাজের জন্যে আরও উন্নতমানের স্ক্যানার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা। কর্মকর্তারা বলছেন, চেয়ারম্যান কোম্পানির মাধ্যমে যে সফটওয়্যার তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন সেই একই সফটওয়্যার বোর্ডের নিজস্ব সফটওয়্যার ডেভেলপাররা তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে সক্ষম। অথচ চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেন মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করতে এমন উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে বোর্ডের অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী মনে করছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, যশোর বোর্ডের সচিব থাকা অবস্থায় তিনি কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেন। যা সেই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই মোল্লা আমির হোসেন চেয়ারম্যান হয়ে এসে একই ধরনের কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সফটওয়্যারের বিষয়ে বোর্ডের ইনোভেশন টিমের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগটা ভালো। তবে, শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটিই দেখার বিষয়-বলেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মধাব চন্দ্র রুদ্র।

বোর্ডের সচিব প্রফেসর আলী আর রেজা বলেন, সরাসরি এসে কথা বললে ভালো হয়।

এ ব্যাপারে জানতে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমন্বয়ে এটা করা হচ্ছে। ফলাফল জালিয়াতির কোন সুযোগই নেই। আর অফলাইনে ডাটা সংরক্ষণ করা হবে। অফলাইনেই যদি করতে হয় তাহলে এই সফটওয়ার কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতিদ্রুত সময়ে ফলাফল প্রস্তুতসহ নির্ভূল ফলাফল প্রস্তুতির জন্য এই সফটওয়ার কাজ দিবে।

জুলাই ২৯, ২০২০ at ১৮:৪৯:১৬ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ডিডি/এমএআর