সিরাজগঞ্জে আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনার পানি

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধিতে জেলার ৬টি উপজেলার নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের ৪৫টি ইউনিয়নের ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৫ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪.০০ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে (১৩ দশমিক ৩৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর পয়েন্টে ১৫ দশমিক ৯৬ মিটার। গত ২৪ ঘন্টায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার (১৫ দশমিক ২৫ মিটার) ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার জানান, ভারী বর্ষণের কারণে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। দু’একদিনের মধ্যে যমুনায় পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে।

গত ২০দিন যাবত সিরাজগঞ্জের ৪৫টি ইউনিয়নের ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৫ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে চরাঞ্চলের সব পরিবার পানির মধ্যেই জীবন কাটাচ্ছে। কেউ ঘরের চালে খোলা আকাশের নিচে, কেউ নৌকায় মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছে। কারো ঘরে চাল আছে তো চুলা নেই। আবার কারো ঘরে চুলো আছে তো চাল নেই। বিশুদ্ধ পানি না থাকায় বন্যার পানি দিয়েই হাত-মুখ ও বাসনপত্র পরিস্কার করছে। রান্না-বান্নাও অনেক সময় বন্যার পানি দিয়েই করতে হচ্ছে। এতে বন্যাকবলিত এলাকায় রোগ-বালাই বাড়ছে। হাত-পায়ে ঘা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ বালাইতে ভুগছে বন্যাকবলিতরা। সার্বক্ষণিক পানিতে থাকার কারণে এসব রোগ দেখা দিচ্ছে।

কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জানান, মধ্য যমুনায় অবস্থিত কাওয়াকোলা ইউপি। চরাঞ্চলের ১৬টি গ্রাম সম্পূর্ণ পানির নিচে। ফসল হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সকলেই পানিবন্দি। ঘর থেকে বের হতে পারছে না কেউ। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি সহায়তা খুবই প্রয়োজন।

জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মো: আব্দুর রহিম জানান, জেলার ৬টি উপজেলার ২৫০ গ্রামের ৫৮ হাজার পরিবারের তিন লাখ ৪০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ২৬৭ মেট্টিক টন চাল, ৩৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও শিশুখাদ্য ও গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ওষুধ ও স্যালাইন মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে।

দেশদর্পণ/আক/এমএআর/এমএআর