নাগেশ্বরীর হলিকেয়ার ক্লিনিকে জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে হলিকেয়ার ক্লিনিকে জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা করায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। জানা গেছে জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে এক ঘন্টা ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ঘন্টাখানেক পরে নবজাতকের নড়াচড়া দেখে স্বজনরা। এর আগে দাফনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। স্বজনদের অভিযোগ বাচ্চা জীবিত আছে জানালেও চিকিৎসক বলেন পাঁচ মিনিটে এ বাচ্চা মারা যাবে।

গত সোমবার দুপুরে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর হলিকেয়ার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। পরে নবজাতককে রংপুরের একটি ক্লিনিকে নেয়া হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নবজাতক সুস্থ রয়েছে বলে তার পিতা জানায়। এ ঘটনায় রোগীর উত্তেজিত স্বজনরা ক্লিনিকে বিশৃংখলার সৃষ্টি করেন। পরে মেয়র ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নবজাতকের পরিবার জানায়, নাগেশ্বরী পৌরসভা এলাকার মালভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে হাবিবুর রহমান সাদ্দামের স্ত্রী গর্ভবতী জান্নাতুন ফেরদৌস নিশির গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে পেটব্যথা উঠলে তাকে নাগেশ্বরী হলিকেয়ার ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে আসে। সেখানে চিকিৎসক রোকেয়া আক্তার বিজলি পরীক্ষা নীরিক্ষা করে নিশি ২৫ সপ্তাহের গর্ভবর্তী এবং সে কিটিক্যাল অবস্থায় রয়েছে, ১০ মিনিটের মধ্যে ক্লিনিকে ভর্তি করে সিজারিয়ান করতে বলেন।

পরে রোগীকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হলেও স্বনরা সিজারিয়ান করতে না চাইলে প্রায় দু’ঘন্টা পর মেয়ে সন্তান প্রসব করলে চিকিৎসক নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন। এর কিছুক্ষণ পর আরও একটি ছেলে সন্তান প্রসব করলে তাকেও মৃত বলে ঘোষণা দেন চিকিৎসক রোকেয়া আক্তার বিজলী। দুই নবজাতককে কাপড়ে ঢেকে রেখে স্বজনরা কান্নাকাটি শুরু করেন।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর দুই নবজাতককে দাফন করতে কাফনের কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে নবজাতকের দুাদু আসলে একজন নবজাতকের কানের কাছে সূরা পড়তে যায়। এক পর্যায়ে ছেলে বাচ্চাটির কানে সূরা পড়ে ফুক দিতে গিয়ে দেখেন সে জীবিত রয়েছে। বিষয়টি চিকিৎসককে জানান। চিকিৎসককে জানানো হলো ছয় মাসের বাচ্চা বাঁচে না এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে মারা যাবে বলে চিকিৎসক বলেন বলেও জানান স্বজনরা। পরে স্বজনরা নবজাতককে রংপুরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় রোগীর স্বজনসহ স্থানীয়রা ক্লিনিকে আসলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় নাগেশ্বরী পৌর মেয়র আব্দুর রহমান মিয়া ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।

নবজাতকের পিতা হাবিবুর রহমান সাদ্দাম বলেন, আমার স্ত্রীকে হলিকেয়ার ক্লিনিকে নিয়ে আসলে ডাক্তার রোকেয়া পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দশ মিনিটের মধ্যে রোগী ভর্তি করতে বলেন। প্রায় দু’ঘন্টায় একটি বাচ্চা হলে ডাক্তার বলেন মৃত বাচ্চা। এরপর আর একটি হলে সেটাকেও মৃত বলেন তিনি। পরে কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়। সবাই কান্নাকাটি করে। আমার বাবা কাফনের কাপড় এনেছে। পরে আমার এক মুরুব্বি বাচ্চার কানে সূরা পড়তে গিয়ে দেখে বাচ্চা নড়ছে। পরে রংপুরে নিয়ে যাই।

এ ব্যাপারে চিকিৎসক রোকেয়া আক্তার বিজলির সাথে সোমবার রাতে কথা হলে তিনি বলেন, আমি তাদের কোন ডেথ সার্টিফিকেট দেইনি। বলেছি বাচ্চা মারা যেতে পারে। ওরা ভুল বুঝেছে। রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নেয়া হবে। মঙ্গলবার মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কল রিসিভ করেননি।

নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রওশন কবীর জানান, রাতে কিছু লোকজন সেখানে উত্তেজিত হয়েছিল। সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এরপর কেউ কোন অভিযোগ করেনি।