কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের কোন ব্যবস্থা নেই

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমানসহ শিক্ষক সিন্ডিকেট গড়ে ঘুষের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি, প্রধান প্রকৌশলীকে কাজ পাইয়ে দিতে হুমকি। নিয়ম বর্হিভুত ভাবে ২৩৫ জন ডে লেবার দিয়ে কাজ করানো, চার বছরে ৬৫ জন শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি-অনিয়মের অডিও ফাঁসের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক বার প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে এসব দুর্নীতি অনিয়মের সাথে যুক্ত থেকে স্বজনপ্রীতির অভিযোগে বিক্ষুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও সাধারণ ছাত্ররা।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল ও প্রকল্প পরিচালক এইচ এম আলী হাসান’র মুঠোফোনে কথোপকোথন সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল। দীর্ঘদিন ধরে আবাসন সংকট, উপযুক্ত প্রশাসনিক ভবনের সমস্যা নিরসন কল্পে বর্তমান এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি নতুন ১০ তলা আবাসিক, ১টি প্রশাসনিক, ১টি একাডেমীক ও ১০টি ভার্টিক্যাল (এক্সেনটনশন) ভবন নির্মাণের জন্য ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের বরাদ্ধ দেয়া হয়। চলতি বছর মার্চ মার্সে এ প্রকল্পে ১০৬ কোটি টাকার একটি দরপত্র আহবান করা হয়। ওই দরপত্রে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে প্রধান প্রকৌশলী আলিম্জ্জুামান টুটুলকে হুমকি প্রদান করা হয়। ১৭ই মার্চ ওই প্রকৌশলী তার ফেসুবক স্ট্যাটাসে ‘ ইবিতে আর চাকরী করা হলো না আমার, রিজাইন করবো ইনশাল্লাহ’ তার এ স্টাটার্সে তোলপাড় শুরু হয় সে সময়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খুব মুখোরোচক খবরও প্রকাশিত হয়। তিনি থানায় জিডিও করেন। কিন্তু গেল চার মাসেও ওই বিষয়ে কোন সুরহা হয়নি। ক্যামেরায় এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজী না হয়ে বলেন, কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন না। প্রয়োজনে তারা দুজনেই চাকরী ছেড়ে দেবেন বলে জানান এই দুই প্রকৌশলী।

কুষ্টিয়া আইইউ ইঞ্জিনিয়ার টুটুল সটঃ মোঃ আলীমুজ্জামান টুটুল ( প্রধান প্রকৌশলী (ভার) কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) (হলদু গেঞ্জি গায়ে)
হুমকির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নাম উঠে আসে এবং ওই দিন ভিসির খুব কাছের মানুষ সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুব রহমান প্রকৌশলী টুটুলের বাড়ীতে ছুটে যান। তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠে। ম্যানেজ করার জন্য নয়, ইবি পরিবারের যে কারোর বিপদে তিনি ছুটে যান। এমন কথা জানালেন সাবেক এই প্রক্টর।

কুষ্টিয়া আইইউ ড. মাহবুব সটঃ ড. মাহবুবর রহমান ( সাবেক প্রক্টর ইবি কুষ্টিয়া) হাফ শার্ট গায়ে মুখের নিচে মাস্ক)
এত সব অভিযোগ সত্য না হলেও মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। দায়িত্বে আসার দুই বছরের মাথায় ভিসি একটি বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। এমন কথা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ এই শিক্ষক।

কুষ্টিয়া আইইউ ভক্সপপঃ ১/ প্রফেসর মুঈদ রহমান ( অধ্যাপক অর্থনীতি বিভাগ)
বিশ্ববিদ্যালয়ে মেগাপ্রকল্পসহ যে কোন কাজ আসলেই নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারের মধ্যে তা বন্টন করা হয়। মেগা প্রকল্পের কাজের জন্য ভিসি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়। এ প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং চুষে খাওয়ার জন্য এ সব অপকর্ম করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে বর্তমান ভিসির কোন ভুমিকা নেই। এমন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও সাধারণ ছাত্রদের।

কুষ্টিয়া আইইউ ভক্সপপঃ ২/ মিজানুর রহমান লালন (সাবেক ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ছাত্রলীগ ইবি)
গত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমীক, প্রশাসনিক অনেক উন্নয়ন হয়েছে দাবী করে প্রধান প্রকৌশলীকে একজন ইমোশোনাল মানুষ বললেন। আর হুমকির বিষয়ে স্পষ্ট করে তিনি কারোর নাম বলেননি। বর্তমানে মেগা প্রকল্পে কারোর বিরুদ্ধে কোন গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে নিশ্চিত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন উর রশিদ আসকারী।

কুষ্টিয়া আইইউ ভিসি সটঃ প্রফেসর ড. হারুন উর রশিদ আসকারী ( উপাচার্য কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) ( উপরে ওয়ান টাইম এপ্রোণ গলায় কালো টাই পরিহিত)
১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়। পরবর্তিতে ১৯৯০ সালে গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের এক মাত্র বিদ্যাপীঠটি নিয়ে সরকারের অনেক ভবিষ্যত পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমান প্রশাসনের অনিয়ম, দুনীর্তির অভিযোগে উন্নয়ন প্রকল্প যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে তেমনি ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। খুব শিঘ্রই এর বিহিত না হলে করোনাকালেও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে আশংকা সংশ্লিষ্ট সকলের।

জুলাই ১৪, ২০২০ at ১৭:১৪:১৬ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মাক/এমএআর