সম্পত্তি হাতিয়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে পেটাল ছেলেরা!

জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি লিখে নিয়েছে ছেলেরা। বাড়ি ও দোকান ঘরের ভাড়াও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন না খেতে পেয়ে মরার অবস্থা বৃদ্ধ দম্পতির। শুধু তাই নয়, আনছার আলী বিশ্বাস (৭৫) ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে (৫৫) বেধড়ক মারপিট করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

বর্তমানে ছেলেদের ভয়ে জীবনাশের আশঙ্কায় ভুগছে বৃদ্ধ দম্পতি। ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের সদরের বসুন্দিয়ায়।

এ ব্যাপারে বৃদ্ধ আনছার আলী আইনের আশ্রয় নিতে মঙ্গলবার যশোরের পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি এসপি কাছে ন্যায় পেতে আবেদন করেছেন।

বৃদ্ধ আনছার আলী বিশ্বাস বলেন, তার পাঁচ ছেলে। বছর সাতের আগে তার স্ত্রী মারা যান। স্ত্রী মারা যাবার পর তিনি নিঃশ্ব হয়ে পড়েন। দেখভাল করার কোন লোক ছিল না। এক পর্যায়ে বছর দুই পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তার ছেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একের পর এক ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে। এরই মধ্যে তার মেঝ ছেলে কাওসার আলী ও ছোট ছেলে ফিরোজ ২০১৭ সালে জাল-জালিয়াতি করে সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধ আনছার আলী বিশ্বাস ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি জাল-জালিয়ারি দলিল রদ করার জন্য যশোর বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে একটি মামলা করেন। যার মামলা নং ৯১/১৮। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

তিনি বর্তমানে বসুন্দিয়া বাজারস্থ সাবেক ১২৫০ নং দাগের বাস্তু জমিতে বসবাস করেন। দলিল রদের মামলার কারণে তার ছেলেরা কেসমত আলী, কাওছার আলী, বাবর আলী, হাছান আলী ও ফিরোজ মিয়া বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। সেই সাথে বাস্তু বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। বাড়িতে যাতে বসবাস করতে না পারে তার জন্য বাঁধা দিচ্ছে। গত ৫ জুলাই (রবিবার) ছেলেরা এক হয়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে বেধড়ক মারপিটসহ জখম করে। এমনকি বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে স্থানীয় মানুষের সহযোহিতায় তারা বাড়িতে ওঠেন। এখন তারা প্রতিনিয়ত বাড়ি থেকে বের করে দেবার হুমকি দিচ্ছে। বৃদ্ধ দম্পতি অসুস্থ হওয়ার কারণে জীবনাশের আশঙ্কায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে আইনগত সহযেগিতার জন্য যশোর পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বৃদ্ধ আনছার আলী বিশ্বাস বলেন, তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ছেলে ও ছেলের বউরা তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। কাপড় ধোয়াসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ নিজেকে করতে হতো। ছেলেরা কখনো কোন খোঁজ-খবর নিতো না।

তিনি বলেন, আমার এত সম্পদ। সব ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি। শুধু নিজের চলার জন্য একটু সম্পদ নামে রেখেছিলাম। তাও ছেলেরা জাল কাগজ করে নিজেদের নামে করে নিয়েছে। বসুন্দিয়া বাজারে একটি মার্কেট আছে, ওই মার্কেটের ভাড়া তুলে আমার সংসার চলতো। এখন তাও বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতি মাসে ৫ তারিখে দোকান ভাড়া পেতাম। ছেলেরা দোকানের ভাড়াটের হুমকি দিয়ে ভাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। ভাড়াটেরা এখন কেউ আর তার দোকান ভাড়া দিচ্ছে না। ফলে খুবই সমস্যায় আছি। না খেয়ে মারা যেতে হবে। যে সব ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি তারা কেউ মানুষ হয়নি। সব অমানুষ হয়ে গেছে। বৃদ্ধ বয়সে ছেলেরা সুখ-স্বাচ্ছন্দে থাকলেও বৃদ্ধ বাবার খবর কেউ রাখে না।
তিনি বলেন, করোনার এই সময়ে বাড়ির বাইরে যেতে ভয় লাগে। তার ওপর ছেলেদের এই নির্যাতন আর সহ্য করতে পারছি না। আপনারা আমাদের আইনের সহায়তা করেন।

দেশদর্পণ/আক/ভক/এমএআর