সোনারগাঁয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক দাবি ইউএনও’র

দেশ প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মিথ্যে ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৮ জুন রবিবার কবির হোসেন কবির মেম্বার নামে এক ব্যক্তি দুদকে ওই দুর্নীতির অভিযোগ করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও একজন ইউপি সদস্যকে বহিস্কারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ সংক্রান্ত উচ্চতর তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)এ অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী ইউপি সদস্য কবির হোসেন। তবে বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে অভিযোগ প্রমানের আহ্বান জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুল ইসলাম।

পিরোজপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার কবির হোসেনকে গত ১২ এপ্রিল ত্রান আত্মসাৎ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ত্রাণ বিতরণ না করে আত্মসাৎ ও গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রস্তাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ আপনাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে আপনাকে উক্ত বরখাস্তের কারণ দর্শানোর জন্য বলা হলো। যদি আপনি তার সঠিক জবাব দিতে না পারেন, আপনাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হবে।

তবে এ নোটিশের প্রেক্ষিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ তুলেন ওয়ার্ড মেম্বার কবির হোসেন। তিনি বলেন তিনি নির্দোষ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে।

কবির হোসেনের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের অনৈতিক চাহিদার ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণের অজুহাতে তাকে নগদ দুই লক্ষ টাকা চাঁদা হিসেবে প্রদান না করায় বা অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্যে বা ব্যক্তিগত আক্রোশে বা অন্য কারো ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা প্ররোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাগ-অনুরাগ ও আবেগের বশবর্তী হয়ে তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার জান-মাল, সম্মান ও সুনাম ক্ষুন্ন করার হীনস্বার্থে উল্লেখিত মিথ্যা, কাল্পনিক অভিযোগে তাকে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য পদ হতে বরখাস্তের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন।

তিনি বলেন, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার অজান্তে, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক কোনরূপ কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু ছাড়াই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও প্রামাণ্য বিহীন অভিযোগ করে আমাকে অন্যায় ও অনৈতিকভাবে বরখাস্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে চরম অপমানিত ও হেয় প্রতিপন্ন হই।

তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উচ্চতর তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছেন।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার কবির হোসেনকে গত ১২ই এপ্রিল রোববার তার দুর্নীতির কারণে উপজেলা ইউএনও মহোদয় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। সেই আক্রোশের বর্শকর্তী হয়ে এমনকি কারো প্ররোচনায় বা ইশারায় তিনি আজ ইউএনওর বিরুদ্ধে দুদকে সাজানো মামলা করেছেন। আমরাও এঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইদুল ইসলাম দুদকে দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি যদি ঘুষের জন্য ইউপি সদস্যকে বরখাস্তের অনুরোধ করতাম, তাহলে তিনি এতো দীর্ঘ সময় বা দীর্ঘদিন পরে এসে নতুন করে অভিযোগ করলেন কেন? এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও পাল্টা সাংবাদিকদের মাধ্যমে ইউপি সদস্যসের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমি কখন, কিভাবে, কার মাধ্যমে তার কাছে ঘুষ দাবি করেছি সেটার প্রমান থাকলে সেটা যেন তিনি আপনাদের কাছে দেন। এছাড়া তিনি বরখাস্ত হওয়ার পর শুনেছি একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। সেখানে আমি তার কাছে যে ঘুষ দাবি করেছি, তখন তিনি সেটিও তো আপনাদের কাছে অভিযোগ করেননি। তাহলে এতোদিন পর তিনি কোন উদ্দেশ্যে, কার প্ররোচনায়, কার ইশারায় আমার বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তুললেন সেটি ইউপি সদস্যকে আপনারা জিঞ্জেস করুন।