উপজেলা, পৌর কমিটি বিলুপ্তির চিন্তা আ.লীগে

তৃণমূলের দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তা নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও দূর করা যাচ্ছে না তা। সম্প্রতি দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করতে নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা চলছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের ভেতরে।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, তৃণমূলের দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করতে হলে মিটিং-সিটিং করে মীমাংসা করা যাবে না। এগুলো দূর করতে নতুন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভিন্ন রকমের সেই উদ্যোগ নিয়ে আলোচনাও চলছে। কী সেই ভিন্ন উদ্যোগ তা জানতে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূলের কোন্দল দূর করতে হলে সাংগঠনিক কাঠামোতে লাগাম টানতে হবে মনে করেন তারা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটির পরে জেলা কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটি রেখে এর মধ্যখানে থাকা অন্যসব কমিটি বিলুপ্ত করে দিতে হবে।

সাংগঠনিক থানা, উপজেলা ও পৌরসভা অধীনে যেসব কমিটি রয়েছে সেসব কমিটি ভেঙে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, জেলা আর ইউনিয়নের মধ্যখানে যেসব কমিটি রয়েছে সংগঠনের জন্য সেগুলো কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। বরং সাংগঠনিক কাঠামোতে এ কমিটিগুলো অযথা জটিলতায় দ্বন্দ্ব-কোন্দলও তৈরি করে। অন্যদিকে দলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে তুলছে তৃণমূলের কোন্দল।

আরও পড়ুন :
ঠাণ্ডা বা ফ্লু থেকে নিস্তার মিলবে এক কোয়া রসুনেই!
মধ্যরাতে আচমকা মাটির নিচে ঢুকে গেল ৫ বাড়ি
শিশুর করোনার লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ যা করবেন

করোনাকালীন সময়ে এ কোন্দল কোথাও কোথাও বড়ভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোন্দলের কারণে অনেক জেলায় ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি। ফলে তৃণমূলে অসুন্দর পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে। কোনো জেলায় দেখা গেছে এমপির ত্রাণ বিতরণে জেলা ছিল না, আবার জেলা-উপজেলা-পৌরসভার কাজে এমপি থাকে না।

এসব নেতা বলেন, টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দ্বন্দ্ব-কোন্দল বোঝা না গেলেও এবার করোনাকালীন সময়ে দল যে অসংগঠিত তা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। গত ১০ বছর সাংগঠনিক গতি আনতে রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমই হয়নি তৃণমূলে। ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানসহ আরও কিছু বিষয়ও দলকে দুর্বল করেছে। জেলার নেতার সঙ্গে এমপির দূরত্ব, উপজেলার সঙ্গে পৌরসভার কোন্দল রয়েছে সর্বত্র। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান পর্যন্ত দ্বন্দ্ব-কোন্দল রয়েছে। এসব দুরবস্থা ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জেলা-উপজেলা সফরে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের চোখে তা প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে।

কেন্দ্রীয় নেতারা আরও জানান, তৃণমূলের দ্বন্দ্ব কোন্দলের অভিযোগ প্রায় প্রতিদিনই ধানম-ির সভাপতির কার্যালয়ে লিখিত আকারে জমা পড়ছে। যা চাইলেও নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলেন, তৃণমূলের সাংগঠনিক বিস্তার রোধ করা সম্ভব হলে এ দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করা সম্ভব হতে পারে।

সেটা কীভাবে জানতে চাইলে এক সম্পাদকমণ্ডলীর নেতা বলেন, তৃণমূলে জেলা কমিটির বাইরে শুধু ইউনিয়ন কমিটি রাখা যায় কি না তা আলোচনায় রয়েছে। মধ্যবর্তী কমিটিগুলো না থাকলে কোন্দল অনেকাংশে কমে যাবে। তিনি বলেন, জেলা কমিটির পরে অন্য কমিটি যেমন উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটিগুলোর আসলে তেমন কাজ নেই। এসব কমিটি থাকায় দলের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হচ্ছে। তৃণমূলে যত বেশি কমিটি থাকবে কোন্দলে অন্তরায় তৈরি করবে। অবশ্য তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কিছু করা হলেও সামনে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এর বাস্তবায়ন করতে হলে সম্মেলনে গঠনতন্ত্রে সংশোধন আনতে হবে।

আরও পড়ুন :
কৃমির যন্ত্রণায় ভুগছেন? সহজেই মুক্তি মিলবে আট ঘরোয়া উপায়ে
মাস্ক না ফেস শিল্ড, করোনা প্রতিরোধে কোনটি কার্যকর?

দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, কেন্দ্রের বাইরে জেলা ও ইউনিয়ন কমিটি ছাড়া অন্য কমিটিগুলো বিলুপ্ত করার ব্যাপারে দলের ভেতর থেকে একটি আলোচনা উঠেছে। দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করতে এ পদক্ষেপ বেশ কাজে আসবে। যদিও এ আলোচনা চূড়ান্ত কোনো রূপ নেয়নি। তবে যেসব আলোচনা-প্রস্তাব উঠেছে তা বাস্তবায়ন করা হলে সাংগঠনিক লাভ-ক্ষতি কী হতে পারে সেসব দিক নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।

দলের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা ছাড়া তৃণমূলে দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, জেলার পরে ইউনিয়ন কমিটি রেখে সারা দেশের অন্যসব কমিটি বাতিল করার সময় আসছে সামনে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট নিয়ে দলের সর্বস্তরে দ্বন্দ্ব-কোন্দল বিরাজমান। তৃণমূলের এ চিত্র দিনে দিনে খারাপ রূপ ধারণ করছে। কীভাবে দ্বন্দ্ব দূর করা সম্ভব সেই আলোচনা চলছে। সূত্র : দেশ রূপান্তর

জুন ২৯, ২০২০ at ১৩:২৯:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেরু/এমএআর