এই চট্টগ্রাম আমার না !

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম :

করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। বিপর্যস্ত আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বিপর্যয় ও হতাশায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে আমার চট্টগ্রামের মানুষ। চিকিৎসা না পেয়ে এই চট্টগ্রামেই প্রতিদিন মারা যাচ্ছে কত লোক তার হিসেব দেওয়া সম্ভব নয়। শত হাসপাতাল, ক্লিনিক ঘুরেও মানুষ চিকিৎসা অবহেলায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। স্বজনের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। সাহায্যের আশায় তারা হাত বাড়চ্ছে। এরপরও অজানা কোন কারণে হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি নিচ্ছেনা। অভিযোগ আছে কোন কোন চিকিৎসকের চিকিৎসা না দেওয়ারও। মানবতার এমন মৃত্যু কেউ কি কোনকালে দেখেছে ?

এদিকে, একটু শ্বাসকষ্ট-জ্বরের কারণে মারা গেলে পাড়া-প্রতিবেশী মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতে না দেওয়ার মতো নিষ্টুর উদাহরণও আমরা সৃষ্টি করেছি। এ কেমন দেশ, কেমন আমার জন্মভূমি চট্টলা। এই চট্টগ্রাম তো আমরা কখনো দেখিনি। দেখিনি নির্মমতার এমন বলি। বিশ্বজোড়া এই চট্টগ্রামের নামডাক। কিন্তু দুর্যোগের এমন সময়টা আমার কাছে এ যেনো অচেনা এক নগর, এক অন্য শহর ! এই চট্টগ্রাম আমার না।

করোনাকালের আগে আমরা নিজেদের অনেক কিছুই ভেবেছি। কত হাঁক-ডাক, কত জয়গান ? কই এসব গুণগানের কোনকিছুই তো দেখতে পাচ্ছেনা মানুষ, দেখতে পাচ্ছেনা বীর চট্টলার জনগণ। বরং চিকিৎসাব্যবস্থার যে এমন সংকটময় অবস্থা তা কখনো দেখব ভাবিনি, ভাবতে পারেনি সাধারণ মানুষ। দেশে মনে হয় চট্টগ্রামেই চিকিৎসাব্যবস্থার এমন দুরাবস্থা, এমন করুণ দশা! প্রতিনিয়ত চিকিৎসার অভাবে চট্টগ্রামের মানুষের সীমাহীন কষ্টের দৃশ্যগুলো ভাইরাল হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, গণমাধ্যমের স্ক্রীনে। কিন্তু কারো কোন ভাবান্তর নেই। নেই কোন অনুশোচনা! চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ কী করবে, কোথায় যাবে ? তাদের যাওয়ার যে কোন পথ নেই। পথ দেখানোরও যে কেউ নেই। দু:খে, বঞ্চনায় যেন মরাটাই এখন বাকি তাদের !

করোনা আক্রান্ত হয়ে এ নগরের বিত্তশালী- প্রভাবশালীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ছুটছেন ঢাকায়, সিংগাপুরে। পেছনে সামর্থ্যহীন মানুষের হাহাকার, চিকিৎসার জন্য ছটফট করার করুণ আহাজারি ! এমন দৃশ্য দেখার জন্য প্রস্তত ছিলনা কোনকালে এ শহরের মানুষ। কিন্তু সেটাই দেখছি।
চট্টগ্রাম আজ কাঁদছে, কাঁদছে জনতা। কান্নায় ই যেন তার শেষ সম্বল। হাল ধরার কেউ নেই। নেই সান্ত্বনা দেবার কোন মানুষ। সুড়ঙ্গের শেষেও কোন আলোর রেখা নেই। হাতাশার অন্ধকার ছেয়ে আছে সর্বত্র। মহামারি করোনা সব তছনছ করে দিয়েছে। মানুষ কখন এ দুর্যোগ কাটিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এরপরও আমরা চাই চট্টগ্রামের এই দুর্দিন কাটাতে কাউকেনা কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অবহেলায় যেন কারো মৃত্যু না হয় সেব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে এই অবহেলার বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে রূখে দাঁড়াতে হবে। কারণ, এই চট্টগ্রামের ইতিহাসের থলিতে এমন উদাহরণ জমা আছে। তারা কখনো হারেনি, হারতে জানেনা। চট্টগ্রামের এই কান্না হয়তো থেমে যাবে। মানুষকে আলোর পথ দেখাবে কেউ।
এই দুর্যোগে, এই সংকটে বীর চট্টলার জনগণকে বাঁচাতে আলোর মশাল হাতে নিয়ে চট্টগ্রাম দরদী কেউ একজনকে নি:স্বার্থভাবে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যে কোন উপায় নেই ! এমন প্রত্যাশা সকলের।

★লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক