করোনা-আম্পান তান্ডব: দিশেহারা চৌগাছাবাসী

বেড়েছে হালখাতার চাপ, থেমে নেই ব্যাংক বীমা এনজিও কর্মীরা
দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে সুদখোররা

যশোরের চৌগাছায় মহামারী করোনা ভাইরাস ও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে মানুষ যখন দিশেহারা তখন শুরু হয়েছে হালখাতার চাপ। শুধু হালখাতা না শহর ও শহরতলীতে চলছে সুদখোরদের দৌরত্ব আর এনজিও গুলোর কড়া তাগিদায় চরম অসহায় এ জনপদের মানুষ। উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের কথা বিবেচনা করে ব্যাংক বীমার তাগিদা ও হালখাতা আরও কিছুদিন দেরিতে করার পাশাপাশি সুদখোরদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনে প্রশাসনে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।

সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী উপজেলা যশোরের চৌগাছা কৃষি নির্ভর উপজেলা হিসেবে খ্যাত। শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে থমকে যায় সব কিছু। যার প্রভাব পড়ে ব্যবসা বানিজ্য কৃষিসহ সর্বত্র। মানুষের কাজ হয়ে যায় বন্ধ, ঘর বন্দি হয়ে পড়েন মানুষ। এই পরিস্থিতির মধ্যে চরম অসহায় হয়ে পড়েন নিন্ম ও নিন্ম মধ্যবৃত্ত শ্রেনীর মানুষেরা। অঘোষিত লগডাউনের বেড়াজাল থেকে মানুষ বের হয়ে গত তিন মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যখন ব্যাস্ত ঠিক সেই সময় হানা দেয় স্মরণ কালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্পান। চরম ক্ষতি হয় উঠতি ফসলের, গাছ গাছালি, ঘরবাড়ি সহ গবাদি পশু পাখির। ঘূর্ণিঝড়ের পর থমকে যায় মানুষের পথচলা। বলাচলে এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। কি ভাবে মানুষ সংসার চালাবে, পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিবে এই চিন্তায় যখন বিভোর, ঠিক সেই সময় শুরু হয়েছে হালখাতার চাপ, সুদখোরদের ব্যাপক আনাগোনা আর ব্যাংক বীমা, এনজিও কর্মীদের কড়া তাগিদা।

 

আরও পড়ুন:
তিন বাহিনীতে করোনায় আক্রান্ত ৭৫৮৩
উহানকে টপকালো মুম্বাই!
ভারতের দিকে আবারো ধেয়ে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল

ভুক্তভোগী উপজেলার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান যে মৌসুম চলছে, তা হালখাতার মৌসুম। এই সময়ে ইরি বোরো ধান কাটা শুরু হয় আর ব্যবসায়ীরা হালখাতা করেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষপট সম্পুর্ণ ভিন্ন। এক দিক করোনার প্রকোপ অন্যদিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারনে কৃষক সব হারিয়ে দিশেহারা। বলাচলে অথৈ সাগরে একটি খড় ধরে তারা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। ঠিক সেই সময়ে দায় দেনাতে বিভোর কৃষকের বাড়িতে আসতে শুরু করেছে হালখাতার চিঠি। কি করবে তারা, কিভাবে দোকানিকে তারা ম্যানেজ করবে এই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে চাষিদের। এই পরিস্থিতির মধ্যে সুদখোরদের দৌরত্ব কোন ক্রমেই থামছেনা। ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি জানান, মাঠে ফসল ফলানোর জন্য সুদে দেনায় আটকে যায়। এক সুদখোরের নিকট থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে দেনা পরিশোধ করি। তাকে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৩ মাস লাভের টাকা দিতে পারেনি। সুদখোররা বাড়িতে এক বিন্দু শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেনা। এই পরিস্থিতিতে কি করব তা ভেবে পাচ্ছি না। বর্তমানে শহর ও শহরতলীতে সুদখোররা ব্যাপক সক্রিয়। তাদের রয়েছে সুসংগঠিত বাহিনী। লাভের টাকা সময় মত দিতে না পারলে নেমে আসে মানষিক এমনকি শারীরীক নির্যাতন। চলতি বছরের প্রথম দিকে যশোর থেকে প্রকাশিক একটি দৈনিকে সুদখোরদের তালকা হচ্ছে, অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে আইন শৃংখলাবাহিনী ব্যবস্থা নিবে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে চৌগাছার সাধারন মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু সেই সংবাদের পর ৪/৫ মাস পার হয়েছে কিন্তু কোন কার্যকর ব্যবস্থা না দেখে অনেকেই আবার হতাশ হয়েছেন।

এদিকে করোনার কারনে ব্যাংক বীমা, এনজিও গুলো কিছু দিন চুপ থাকলেও তারা পুনরায় তাগিদা শুরু করেছে। শুধু তাগিদা না সুদে আসলে টাকা আদায়ে এ সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা মরিয়া। পৌর এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, হাউজ বিল্ডিং থেকে লোন নিয়ে তারা বাড়ি করেছেন। মার্চ ও এপ্রিল কিস্তির টাকা জমা দেননি। জুন মাসে তারা কিস্তির টাকা জমা দিতে যেয়ে সুদে আসলে সমুদয় টাকা জমা দিতে হয়েছে। হাউজ ব্লিডিং এর একজন দয়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, লাভের টাকা নেয়া যাবে কি যাবে না এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এমনকি সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের প্রধানের নিকট থেকে সুনির্দিষ্ঠ করে কিছুই পাওয়া যায়নি। সে কারনে পূর্বের মতই আমরা কিস্তির টাকা গ্রহন করছি। একই অবস্থা বিরাজ করছে এনজিও গুলোর ক্ষেত্রেও। এনজিও গুলোর কর্মীদের অব্যহত চাপের মুখে দিশেহারা স্বল্প আয়ের মানুষেরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নানা কারনে তারা ঋনগ্রস্থ্য হয়ে পড়েছেন, নিয়মিত সব কিছুই চলছিল, কিন্তু করোনা ও ঝড়ের কারনে তাদের সব কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ঋনের কিস্তির টাকা পরিশোধে আরও সময় দেয়ার পাশাপাশি সুদখোরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ উপজেলার সচেতন মহল।

জুন ১০, ২০২০ at ২০:৪৭:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/তআ