গরু চুরিতে ধরা খেয়ে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দিলেন চোর!

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরে গরু চুরি করতে গিয়ে এলাকাবসীর গণপিটুর শিকার হয়েছে আন্তঃজেলা গরু চোর চক্রের হোতা আলী হোসেন প্রকাশ চোরা হোসেন (৫০)। বুধবার (৩ জুন) দিবাগত রাত ১টার সময় উপজেলার ৮নং ইউপির ৯নং ওয়ার্ড চরকাছিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) অভিযুক্তের ভগ্নীপতি আবদুল মান্নান তার শালাকে মারধর করার অভিযোগে ১৩ জনকে আসামি করে রায়পুর থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জানা যায়, আলী হোসেন একই গ্রামের চৌকিদার বাড়ির মৃত নুরুল ইসলাম চৌকিদারের ছেলে। বর্তমানে সে স্থানীয় মেম্বার ৯নং ওয়ার্ড ফারুকের তত্ত্বাবধানে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আলী হোসেন আগে বিদেশে ছিলো। কিন্তু দেশে আসার পর ঠিক করে রাতে ঘুমাতে পারছি না। ২০ বছর এলাকা থেকে প্রায় ১৫০টি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা এবং আটটি শালিস হয়েছে।

পাশ্ববর্তী ৮নং ওয়ার্ডের জীবন নেছা (৪৫) স্বামী তোফায়েল আহমেদ ও মালেক বেগম (২৫) স্বামী বাচ্ছু ঢালী জানান, ৫ মাস আগে চোর আলী হোসেন আমাদের গরু চুরি করেছে। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় একই ওয়ার্ড মেম্বার নজরুল এবং ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার ও সাবেক চেয়ারম্যান রশিদ মোল্লা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

আরও পড়ুন :
লক্ষ্মীপুরে পিকআপ চাপায় এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত
লক্ষ্মীপুরে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার
৮ম শ্রেনীর স্কুল ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন ধর্ষন,যুবক গ্রেপ্তার

আলী হোসেনের নিজ ওয়ার্ড মেম্বার ফারুক বলেন, আমি এই পর্যন্ত চুরি করার পাঁচটি শালিস করছি। আলী হোসেনের নিজ ভাগিনা দেশ জার্নাল ডট কমকে জানায়, আমার মামা আগে চুরি করতো, এখন আর চুরি করে না। মামাকে ষড়যন্ত্র করে মার দেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত আলী হোসেন বলেন, আমি চুরি করি নাই, মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে আহত করা হয়েছে এবং আমি মামলা করেছি। চেয়ারম্যান মিন্টু ফরাজি বলেন, আলী হোসেন আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্য। চোরের চুরিতে এলাকার মানুষ অভিযোগে আমি অতিষ্ট। এক বছর আগে রায়পুর থানায় জি আর নং ২০৩/১৮ এর সরকারি মামলায় চারটি গরুসহ চালান দিয়েছি এবং সেই মামলায় চার মাস জেলে ছিলো। তারপরও তার চুরি বন্ধ হয় নাই। আমি উপজেলার আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে কয়েকবার গরু চোর আলী হোসেনের সম্পর্কে কথা বলেছি।উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও রায়পুর থানার ওসি এর সম্পর্কে অবগত আছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

মামলার মুল বিবাদী একই গ্রামের মুন্সি বাড়ির কামরুল(২৫) পিতা মৃত ওমর ফারুক মুন্সি বলেন, গত বুধবার রাত ১টায় আমার বাড়ির কুকুর গেউ গেউ করে উঠে তখন আমি দরজা খুলে দেখি আমার গরু নিয়ে কে যেন চলে যায়। তখনই আমি চিৎকার দিলে চারপাশে থেকে লোকজন এসে হোসেনকে হাতে নাতে ধরে। হোসেনের সাথে আরো দুজন ছিল। তাদেরকে ধরার চেষ্টা করলে হোসনে হাতের চুরি দিয়ে বাঁধা দেয়। তখনই এলাকাবাসী তার গায়ে হাত দেয়।

এই মামলার কয়েকজন আসামি বলেন, এলাকায় গত কয়েক মাসে অন্তত ১০টি গরু চুরি হয়ে গেছে। এতে এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষেরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এসব চুরি সংঘটিত হয়। আর চুরিকৃত সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা তাদের মধ্যে হয়ে থাকে। যে কারণে এলাকার প্রভাবশালী ওই মহলের ইন্ধনে জনগণের হাতে আটক গরু চোরের ভগ্নীপতি আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।

রায়পুর থানার ওসি তোতা মিয়া বলেন, মারপিটের আহতের ঘটনায় হাজী মারা পাড়ি থানায় মামলা করা হয়েছে। গরু চুরির মামলাটি তদন্তের জন্য এস আই জাহাঙ্গীরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

জুন ০৭, ২০২০ at ১৩:৩০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আক/এমএআর