ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে চৌগাছার বহু এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন

যশোরের চৌগাছার উপর দিয়ে বয়ে চলা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্পানে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গোটা উপজেলার বিদ্যুৎ সংযোগ, আর এটা ঠিক করতে ইতি মধ্যে হিমসিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গত ১০ দিনে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন দিন রাত নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনও উপজেলার বহু এলাকা রয়েছে অন্ধকারে। কবে নাগাদ ওই সব এলাকার মানুষ আবার বিদ্যুৎ এর দেখা পাবে তা জানে না।এরই সাথে হঠাৎ বেড়ে গরমের তিব্রতা। তবে দু’এক দিনের মধ্যেই গোটা উপজেলা তে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হবে বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগ।

গত ২০ এপ্রিল বুধবার স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় দেখেছেন সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছার মানুষ। বুধবার দুপুরে ঝড়ের তান্ডব শুরু হয়ে তা শেষ হয় বৃহস্পতিবার ভোর ৫ টার দিকে। উপজেলার বয়োবৃদ্ধরা বলছেন তাদের জীবনে এমন ঝড় তারা কখনও দেখেনি। ভয়াবহ সেই ঘূর্ণিঝড়ে গোটা উপজেলা তছনছ হয়ে গেছে। ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুৎ লাইনের। গ্রাম, শহর, মাঠ, ঘাট সব এলাকায় বিদ্যুতের খুটি উপড়ে কিংবা ভেঙ্গে পড়ে গেছে। বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়ে আছে সড়কে, গাছে কিংবা পুকুরের পানিতে। বিদ্যুত লাইনের এতটাই ক্ষতি হয়েছে যে ঝড় শেষ হওয়ার ১০ দিন পার হয়েছে অথচ আজও উপজেলার অনেক গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের দেখা পাইনি। তারা কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পাবে তাও জানেনা।

উপজেলার কাবিলপুর, গুয়াতলী, চাঁদপাড়া, দিঘলসিংহ, মাশিলাসহ বেশ কিছু এলাকা এখনও রয়েছে অন্ধকারে। গত ১০ দিন বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকায় ওই এলাকার মানুষ পড়েছেন মহাবিপাকে। বিদ্যুত সংযোগ না থাকার কারনে মোবাইল ফোন বন্ধ, নেই কোন নেটওয়ার্ক। বিদ্যুত চালিত বিভিন্ন যানবাহনও অচল পড়ে আছে। এর সাথে যারা সম্পৃক্ত তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে দিন পার করছেন বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা
রোববার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে চলবে ব্যাংক

উপজেলা বিদ্যুত অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড়ে চৌগাছায় বিদ্যুতের কমপক্ষে ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুত লাইনে যে পরিমান ক্ষতি হয়ে তা মেরামত করতে হলে অন্তত ৩ মাস সময় লেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমের সঠিক দিক নির্দেশনা ও সংশ্লিষ্ঠ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগীতায় মাত্র ১০ দিনের মধ্যে গোটা উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। নিজ জেলা, উপজেলা ছাড়াও পাশ^বর্তী ফরিদপুর ও শরিয়াতপুর জেলা থেকে বিদ্যুতের লাইন ক্রুদের চৌগাছাতে নিয়ে এসে সব মিলিয়ে প্রায় দেড়’শ কর্মী ও ৫জন ঠিকাদার দিনরাত বিরামহীন ভাবে কাজ করে এই সফালতা পেয়েছেন বলে কাজের সম্পৃক্তরা মনে করছেন।

সরেজমিন শুত্রবার বিকালে উপজেলার গুয়াতলী গ্রামে যেয়ে দেখা যায়,বিদ্যুৎ এর মেন তার ছিড়ে রাস্তার উপর পড়ে আছে।বিদ্যুৎ বিভাগ এখনও এটা ঠিক করেনি।নাম প্রকাশ না করা শর্তে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন,বেশ কয়েকদিন আগে এই মেন লাইন ঝড়ে নষ্ঠ হয়ে গেছে কিন্তু এখনও বিদ্যুৎ বিভাগের লোক আসেনি ঠিক করতে ।আর কবে যে এটি ঠিক হবে আমরা বুঝতে পারছিনা।

পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) প্রকৌশলী কামাল জিয়াউল ইসলাম বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্পানে চৌগাছায় পল্লী বিদ্যুতের যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা পুশিয়ে নেয়া কষ্টের। তছনছ হয়ে যাওয়া সব কিছু এত দ্রুত মেরামত হবে তা ভাবাও যায়না। তবে আমি দ্রুত আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহীত করেছি, সঙ্গে সঙ্গে তাদের সহযোগীতা পেয়েছি যার কারনে ৩ মাসের কাজ ১০ দিনে শেষ করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় তিনি সাতক্ষিরাতে চাকুরী করতেন সেই অভিজ্ঞতা এবং জাপানে ২ মাস প্রশিক্ষন নিয়েছেন এই সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্রুত সময়ে বিদ্যুত সংযোগ সচল করতে পেরেছি। তবে এই দুঃসময়ে তিনি স্থানীয়দের ব্যাপক সহযোগীতা পেয়েছেন বলেও স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন,দু’এক জায়গায় বিচ্ছিন্ন ভাবে যারা এখনও বিদ্যুতহীন আছেন তারা অতিদ্রুত বিদ্যুৎ পাবেন বলে জানান।

মে ২৯, ২০২০ at ১৮:৫২:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/আরএইচ