মুসলমান জাতির জন্য অন্যরকম এক ঈদ

আনন্দের সবচেয়ে বড় উপলক্ষ ঈদ, কিন্তু দৃশ্যমান কোন প্রস্তুতি নেই, নাম মাত্র কেনাকাটা, নতুন জামা কাপড় পড়ে আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়ানো, নেমন্তন্ন খাওয়া, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা, কোলাকুলি, ঘনিষ্ঠ হয়ে সেল্ফি তোলা এমনকি করমর্দন করা চলবে না তবুও এর নাম ঈদ, লকডাউনের মধ্যেই ঈদ উদযাপন করতে হবে। ফলে প্রস্তুতি নেয়া বা উদযাপনের এমন সুযোগ নেই। চারপাশে তাকিয়ে সেটা বোঝা যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণেই বিবর্ণ পানসে, ফ্যাকাশে এবারের ঈদ। প্রতিদিনের জীবন-যাপন ব্যবসা চাকুরী, স্কুল কলেজের রুটিন সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ঘুম খাওয়ার ঠিক নেই। দিন-রাতের পার্থক্য করাও মুশকিল, সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে এবারের ঈদে।

আরো পড়ুন :
দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি, সোমবার ঈদ
যশোরে ২৪ তম বিসিএস ফোরামের ঈদ উপহার বিতরণ
চুয়াডাঙ্গায় প্রতিটি মসজিদের জন্য ৫০০০ টাকা বিতরণ

সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে অনেক আগেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার, এখনো তা অব্যাহত আছে। আর কতদিন এই লকডাউন চলবে তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। প্রতি বছর রমজানের একেবারেই প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হয় ঈদের কেনাকাটা। এই সময়ে এসে উৎসবের আনন্দ ভরা মূহুর্ত ছড়িয়ে পড়তে থাকে সবার মাঝে। ঈদের আগ মূহুর্তে যানজট সৃষ্টি হয় ঢাকার রাস্তায়, এবার সবই অনুপস্থিত। নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের কথা ভেবে জীবীকার জন্য দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ক্রেতার উপস্থিত খুবই কম। সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায় ইচ্ছা শর্ত থাকলেও মার্কেট মুখী হয়নি অনেকেই। ঈদে বাড়ী ফেরাও বহুকালের রীতি। নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে যান অসংখ্য মানুষ।

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাও ফাঁকা হয়ে যায়। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান করে শহর ছেড়ে যায় মানুষ। তারাও আগে টিকেটের জন্য ছুটাছুটি শুরু করে। এভাবে আনন্দটা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমানে এসবের কিছুই হচ্ছে না বরং ঈদ উপলক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সরকার। যে যেখানে আছেন সেখানে থেকেই ঈদ উদ্যাপন করতে হবে।

উদ্যাপনের সূচনাটি সাধারণত হয় ঈদগাহে। বিশাল খোলা মাঠে সবাই মিলে জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ করমর্দন ও কোলাকুলির সুন্দর একটি ছবি আমরা প্রতি বছর দেখি। অচেনা মানুষটিকেও গভীর আবেগে ভালবাসায় জড়িয়ে ধরা যায় এ সময়। তবে করোনাকালে এমন ভ্রাতৃত্ববোধ সামাজিকতা বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এবার ঈদের জামাত সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদে আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারী নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জামায়াত শেষে করমর্দন ও কোলাকুলি পরিহার করতে হবে। নামাজের জন্য কাতারে দাঁড়ানোর সময় শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।

জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। ফলে করমর্দন বা কোলাকুলি পরিবহার করার পাশিাপাশি, কেউ কারও মুখটিও ঠিকমতো দেখত পারবেন না। সর্বোপরি মানুষের মধ্যে প্রিয়জন হারানোর বেদনা-শোক-শঙ্কা।

এ অবস্থায় ঈদ আর ঈদের মতো হবে না বলেই পূর্ব থেকেই সরকারের প্রস্তুতিতেই আভাস উঠে এসেছে। আনন্দের সবচেয়ে বড় উপলক্ষ ঈদ, কিন্তু দৃশ্যমান কোন প্রস্তুতি নেই, নাম মাত্র কেনাকাটা, নতুন জামা কাপড় পড়ে আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়ানো, নেমন্তন্ন খাওয়া, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা, কোলাকুলি, ঘনিষ্ঠ হয়ে সেল্ফি তোলা এমনকি করমর্দন করা চলবে না তবুও এর নাম ঈদ। এরকম ঈদ যেন আর না আসে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

লেখক : লিখন রাজ

মে ২৩, ২০২০ at ২০:৩৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এলআর/এএডি