বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরালস চেষ্টায় ইউএনও আসাদুজ্জামান

হ্যাঁ ছবিতে যাকে দেখছেন তিনিই হচ্ছেন তালতলীর বর্তমান ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান। তালতলী উপজেলার নির্বাহী অফিসার হিসাবে যোগদান করেছেন চলতি বৎসর এপ্রিল মাসের শেষ দিকে। যোগদানের মাত্র ১ মাসের মধ্যে তিনি বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যখন মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরাসহ জীবন যাপনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। তখন বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তালতলীর মানুষের সুরক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে দিন রাত পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি।

তালতলীর প্রতিবন্ধী (বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন) এবং মাতৃত্বকালীন সময়ে মায়ের পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য তাদের হাতে পুষ্টিকর খাদ্য তুলে দিচ্ছেন তিনি। শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য তুলে দেয়াই শেষ নয় করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া, অসহায় দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্রদের মাঝেও প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা উপহার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তিনি। শুধুই কি তাই? মধ্যবিত্ত যারা লোকলজ্জায় কারও কাছে কোন কিছু চাইতে পারেন না বা চাইতে পারছেন না তাদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিনি মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। এমনকি ইউএনও নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে কর্মহীন হয়ে পড়া, অসহায় দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্রদের মাঝেও প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সামগ্রী বাড়িতে গিয়ে নিজেই খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।

আতংকিত না হয়ে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শও দিচ্ছেন ইউএনও আসাদুজ্জামান। এছাড়াও তার নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনের জনসচেতনতামূলক প্রচারণা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা, জনসমাগম এড়ানো, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, দেশের বাইরে ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগতদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এই মানুষটি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও তার পরিবারের কথা না ভেবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তালতলীর মানুষের জন্য।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ইউএনও’র কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। উপজেলার মালিপাড়া এলাকার ছোহরাফ হোসেন মীরের ছেলে তানভীর হোসেন (১৮) প্রতিদিনের মত মাদক সেবন করে মাতলামি করছে। এ খবর পেয়ে তালতলী থানা পুলিশ উপজেলা সদরের বাঁধঘাট এলাকা থেকে গাজাসহ মাদকাসক্ত অবস্থায় তাকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করে। মাদক সেবীকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসাদুজ্জামান।

এছাড়াও মানবিক কাজে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন ইউএনও আসাদুজ্জামান। স্থানীয ইমরান হোসেন খান নামের এক জন্মগত ভাবে প্রতিবন্ধীর পরিবারের পাশে এই ইউএনও । হাত পা থাকলেও সেটা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোট। বাবা একজন সাধারণ কৃষক। অভাব অনটনে চলে ইমরানের পরিবার। প্রতিনিয়তই চলছে জীবন সংগ্রাম। এমন অসহায় জীবনযাপন করা ইমরানের পাশে এর আগে এগিয়ে আসেনি কেউ। কোনো মতে কাঠ ও লোহার রড দিয়ে বানানো হুইলচেয়ারে বসে জীবন চলতো। ইমরানের হুইল চেয়ারের সহযোগিতা চেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ওলিউল ইসলাম জুয়েল ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। পোস্টটি তাৎক্ষণিক তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আসাদুজ্জামান এর নজরে আসে। তিনি পরবর্তীতে ঐ প্রতিবন্ধীকে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ’র সহযোগিতায় ১ টি হুইল চেয়ার ও ১ হাজার টাকা উপহার দেন।

মধ্যবিত্ত এক পরিবারের ঘরে খাবার শেষ হওয়ার খবরটি জানিয়েছিলেন সেই ব্যক্তির মেয়ে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঠানো ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মধ্যরাতে তার বাসায় হাজির হলেন তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান। বাড়িতে কে আছেন? দরজা খুলুন। দরজা খুলে অবাক অসহায় এক মধ্যে বয়সী মানুষ হকচকিয়ে বললেন স্যার এতো রাতে আমার বাড়িতে আপনি? ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আপনার জন্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এসেছি।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় সফল ইউএনও আসাদুজ্জামান। তার গতিশীল নেতৃত্বের কারনে তালতলী উপজেলায় মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি প্রায় শূণ্যের কোঠায়। বিভিন্ন ঝূকিপূর্ন এলাকা পরিদর্শনসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময় (বুধবার রাতে) জীবনের ঝূকি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র তিনি পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করা লোকজনের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। এসময় তিনি বর্তমান সরকারের সাফল্য বর্ননা করে সকলকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী কালীন সময় বৃহস্পতিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে সরকারী সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে তালিকা ভুক্ত করেন। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, বর্তমান কোভিড -১৯ মোকাবেলায় গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিদের্শনা মোতাবেক সকল দায়িত্ব পালন করি। মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি করি ও নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। বর্তমান ঘূর্নিঝড় আম্ফানে যেন তালতলী বাসীর বিশেষ কোন ক্ষতি না হয় এজন্য আমি প্রতিটা ইউনিয়নে গিয়ে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সচেতন করেছি। এতে করে মানুষের জানের কোন ক্ষতি হয়নি। আর যারা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি।