ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডব

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সাইক্লোন আম্পান ভয়াবহ ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। প্রবল ঝড়ের সঙ্গে অতিবৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুন্দরবনের কিছু অংশসহ রাজ্যের উপকূলীয় এলাকা। রাজ্যের দুটি জেলা উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ঝড়ের কবলে প্রাণ গেছে অন্তত ১২ জনের। হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি। ভেঙে গেছে কয়েকশত বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, ‘আমরা এক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছি।’ তার দাবি, রাজ্যজুড়ে ঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত এক লাখ কোটি রুপির। এ ক্ষতি করোনা মহামারির চেয়েও ভয়াবহ। এদিকে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে আরেক রাজ্য ওড়িশাও। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

আরো পড়ুন :
নবীনগরে আওয়ামীলীগ নেতার ৩ হাজার পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ
ঘূর্ণিঝড় আমপান এখন স্থল নিম্নচাপ, সতর্ক সংকেত কমল
তাহিরপুরে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে হয়রানি করার অভিযোগ বিকাশ এজেন্ট তপনের বিরুদ্ধে

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্পান বুধবার সন্ধ্যায় ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানে। ঝড়ে সুন্দরবনসহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ-চব্বিশ পরগণার পাথরপ্রতিমা, নামখানা, বাসন্তি, কুলতলী এবং কলকাতা শহরের কাছে বারুইপুর ও সোনারপুর এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে আম্পান। উত্তর-চব্বিশ পরগণার বারাসত, বশিরহাট এবং বনগাঁ পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। উত্তর ২৪ পরগনায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বসিরহাটে। জেলায় প্রায় ১০ হাজার বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। তবে পূর্ব মেদিনিপুর জেলা এবং দিঘার দিকে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

কলকাতা মহানগরেও ক্ষয়ক্ষতি কম হয়নি। কলকাতা বিমানবন্দর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। কলকাতা পৌরসভা সূত্রের খবর, শহরে অন্তত ৩০০ ঘরবাড়ি ভেঙেছে। বিদ্যুৎহীন বহু এলাকা। লণ্ডভণ্ড অবস্থা বিধাননগর পৌর এলাকার। সল্টলেকের অধিকাংশ ওয়ার্ডে গাছ ভেঙে পড়েছে। দত্তাবাদসহ একাধিক জায়গায় কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে। তবে বিপজ্জনক বাড়ি, নিচু এলাকা থেকে আগেই লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছিল প্রশাসন। জলোচ্ছ্বাস হাওড়া ফেরিঘাটের সবচেয়ে উঁচু জেটিকেও ডুবিয়ে দিয়েছে।

প্রশাসনের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ৫ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ায় প্রাণহানি কমেছে। তারপরও অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কলকাতার রিজেন্ট পার্কে দেওয়াল চাপা পড়ে এক নারী ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আরও দু’জনের মৃত্যুসংবাদ মিলেছে। উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় নুরজাহান বেওয়া নামে এক নারী (৫৬) গাছ ভেঙে পড়ে এবং গোপাল ভুঁইয়া (৩২) নামে এক যুবক ঝড়ে উড়ে আসা কিছুর আঘাতে মারা গেছেন। বসিরহাট-২ ব্লকের মোহান্ত দাস (২০) নামে এক যুবক গাছ পড়ে এবং হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় লক্ষ্মীকুমার সাউ নামে বছর তেরোর এক কিশোরী বাড়ির টিনের চাল ভেঙে মারা গেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে মাটির বাড়ি চাপা পড়ে ছবিরানি শিট (৫৮) এক নারীর মৃত্যুর খবর মিলেছে। এছাড়া পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে তিন জন মারা গেছেন।

আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আমপানের তাণ্ডবের সময়ে দমদমে ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটার এবং কলকাতার আলিপুরে ১১৪ কিলোমিটার। রাত পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে ২৪৪.২ মিলিমিটার। কলকাতায় তাণ্ডব চালিয়ে ঝড়টি নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের দিকে বয়ে গিয়েছে।

মে ২১, ২০২০ at ১২:৫০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসকে/এএডি