পিপুলবাড়ীয়ায় ভুয়া ডাক্তার রিমার প্রতারণায় সর্বশান্ত এলাকাবাসী !

এমবিবিএস ডাক্তার ব্যতিত অন্য কোন চিকিৎসক তার নামের আগে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন না, মহামান্য হাইকোর্টসহ বিএমডিসি এমন একটি লিখিত নির্দেশনা জারী করলেও তা উপেক্ষা করে নিজেকে একজন ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সিরাজগঞ্জ সদরের পিপুলবাড়ীয়া বাজারের দত্তবাড়ী রোডে একটি চেম্বার খুলে বসেছেন রিমা খাতুন। এদিকে তিনি নিজের পরিচয় আরো আকরষণীয় করে ফুঁটিয়ে তুলতে সাইনবোর্ড, প্যানা ও ভিজিটিং কার্ডে তার নামের আগে ডা. রিমা খাতুন উল্লেখসহ নিজেকে একজন মেডিসিন, শিশু ও মহিলা (গাইনী) রোগে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দাবী করেছেন। এতে এলাকার ভুক্তভোগিসহ সাধারণ মানুষের অভিযোগ রিমা খাতুন এভাবে চিকিৎসার নামে চেম্বার খুলে বসে শুধু প্রতারণা করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তার প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় ইনসাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্থানীয় কয়েকজন ঔষধ ব্যবসায়ী। এতে একদিকে তিনি আগত রোগির নিকট থেকে ব্যবস্থাপত্রের নামে অতিরিক্ত ফি নিচ্ছেন আবার কৌশলে ওই রোগির নিকট থেকে আলট্রাসনোসহ বিভিন্ন পরীক্ষার নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরো পড়ুন :
চলচ্চিত্র অভিনেতা রানা হামিদ আর নেই
মা একমাত্র বিনা সুদে ভালোবাসার ব্যাংক
কৃষকের ধান কেঁটে সহযোগিতা করলেন ইবি ছাত্রলীগ নেতা

স্থানীয়দের অভিযোগের আলোকে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রিমা খাতুন কোন এমবিবিএস ডাক্তার নন, তিনি ঢাকা থেকে ডিএমএফ করেছেন, তার রেজিস্ট্রেশন নং-১৫২২৮। অথচ তিনি আগত রোগীকে স্থানীয় পিপুলবাড়ীয়া বাজারের ইনসাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে নিজেই আলট্রাসনো করছেন, যা তার করার কোন বিধান নেই। কোন রোগীকে আলট্রাসনো করতে হলে একমাত্র একজন এমবিবিএস করতে পারবেন তাও আবার তার সনোলজিস্ট বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং সনদ থাকতে হবে। এছাড়া কোন ডিপ্লোমাধারী কোন চিকিৎসক আলট্রাসনো করতে পারবেন না এবং নিজের নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। উপরোন্ত রিমা খাতুন স্থানীয় ইনসাফসহ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে যোগসাজসে নানা অজুহাতে আলট্রাসনো করাচ্ছেন। এভাবে বিভিন্ন অজুহাতে নানা কৌশলে সহজ-সরল মানুষের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, রিমা খাতুনের বাড়ী কুষ্টিয়ায়। তিনি সম্পর্কের সুত্রধরে পিপুলবাড়ীয়া এলাকার তাঁত শ্রমিক জাহাঙ্গীরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই চেম্বার খুলে বসেছেন। তার চেম্বারে স্বামী জাহাঙ্গীরকে সিরিয়াল মেইনটেন্স করার জন্য নিয়োজিত রেখেছেন। পক্ষান্তরে সাইন বোর্ড,প্যানা ও ভিজিটিং কার্ডে রিমা খাুনের নাম থাকলেও কৌশল তিনি সেখানে স্বামী জাহাঙ্গীরের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছেন। এনিয়েও রয়েছে এলাকায় নানা কৌতুহল।

স্থানীয় এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী জানান, সম্প্রতি তার কপাল কেটে গেলে তিনি রিমা খাতুনের সাইনবোর্ডে কাটা সেলাই করা হয় দেখে তার চেম্বারে আসলে তিনি যেখানে সেলাই দিতে হবে দুইটা সেখানে তার কপালে সেলাই দিয়েছিলেন ৫টা আর এজন্য তার কাছে দাবী করা হয় ১ হাজার টাকা। পরে অনেক হট্টগোলের পর বাসেদ নামক এক ব্যক্তি তা ৫০০টায় নিস্পত্তি করে দেন। এতে তার দাবী এভাবে তার মতো অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন।

এদিকে রিমা খাতুনের প্রতারণার হাত থেকে ভুক্তভোগিদের রক্ষা এবং অপচিকিৎসা বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগসহ দুর্নীতি দমন কমিশন তথা প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এবিষয়ে রিমা খাতুন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান আমি এমবিবিএস পাশ করিনি কিন্তু আমার বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন সাটিফিকেট আছে এনিয়ে ডাক্তার লেখা বা ডাক্তারি করতে পারবো আমি। এতে কোন সমস্য হতে পারেনা। ডাক্তারি করতে যে এমবিবিএস পাশ করতে হবে আমি জানানাই।

এব্যাপারে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা.জাহিদুল ইসলামের সাথে যোগায়োগ করা হলে তিনি জানান, এমবিবিএস ব্যতিত অন্য কোন চিকিৎসক তার নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না, কেননা এসংক্রান্ত বিষয়ে সরকারীভাবে এবং মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়াও এমবিবিএস ডাক্তার ব্যতিত অন্য কোন চিকিৎসক আলট্রাসনো করতে পারবেন না। কাজেই সরকারী ও মহামান্য হাইকোর্টের নিষেজ্ঞা উপেক্ষা করে এমবিবিএস ব্যতিত যদি কোন চিকিৎসক দ্বারা এধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে দ্রুত তদন্ত পুর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মে ১০, ২০২০ at ১১:২১:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআর/এএডি