মেম্বারের নামে ভিজিডি কার্ড, একজন ৪ বছর অপরজন ১ বছর পর কার্ড পেলেন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় এক ইউপি মেম্বারের নামে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভিজিডি কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। শারমিন সুলতানা (৩৯) নামে ওই মেম্বার আবার অন্য দুজনের নামে আলাদা দুটি কার্ড ইস্যু করিয়ে নিজের কব্জায় রেখে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একজনকে ৪ বছর পর এবং অপর আরেকজনকে ১ বছর পর সেই কার্ড দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসে এই অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানার নিজের নামে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত মাসিক ৩০ কেজি খাদ্যশস্যের (চাল) ভিজিডি কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। গত বছরের ১১ মার্চ ইস্যুকৃত কার্ড নম্বর ৬। কোনো জনপ্রতিনিধির নামে এই কার্ড ইস্যু করার নিয়ম না থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।

আরও পড়ুন :
যশোরের শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া মওকুফের আহ্বান যবিপ্রবি উপাচার্যের
শ্রমিক সংকটে ধান কাটলেন চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগ
কিট পরীক্ষার অনুমতি পেল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

এ ছাড়া মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা তার এলাকার জামাল সরদার (৫০) নামের এক ব্যক্তির নামে খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত সুলভ মূল্যের (ওএমএস) কার্ড ইস্যু করে ৪ বছর ধরে আটকে রেখেছিলেন। ২০১৬ সালে ইস্যুকৃত সেই কার্ড গত ১৫ এপ্রিল স্বত্বাধিকারী জামাল সরদারকে দেন তিনি।

বৈরাগীর চর গ্রামের মৃত মালু সরদারের ছেলে ভুক্তভোগী জামাল সরদার জানান, ২০১৬ সালের শেষের দিকে তিনি স্থানীয় মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানার কাছে সুলভ মূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের ওএমএস কার্ড তৈরির জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি দেন। কিন্তু তার কার্ড হয়নি বলে জানিয়ে দেন মহিলা মেম্বার। জামাল সরদার বলেন, ওএমএস, ভিজিডি ও ত্রাণের বিষয়ে অনিয়ম ঠেকাতে সেনাবাহিনীর তৎপরতা শুরু হচ্ছে, এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় চলতি মাসের ১৫ তারিখ সকালে আমার কাছে কার্ড পৌঁছে দেন মেম্বার শারমিন আক্তার। চার বছর ধরে কার্ড আটকে রেখে চাল উত্তোলনের বিষয়ে বিচার দাবি করেন তিনি।

২ নং ওয়ার্ডের মানছুরা খাতুন (৪০) নামের এক নারীর নামে গত বছরের প্রথমের দিকে ভিজিডি কার্ড ইস্যু করা হলেও এতদিন কিছুই জানতেন না তিনি। তার ওই কার্ডে গত ১ বছর ধরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ওঠানো হয়েছে। কার্ডটির নম্বর ৪।

বৈরাগীর চর গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের স্ত্রী ভুক্তভোগী মানছুরা খাতুন জানান, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ স্থানীয় মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা তাকে ভিজিডির কার্ড করে দেয়ার কথা বলেন। তার কথা অনুসারে নিজের ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দেয়া হয় তাকে। এরপর কার্ডের জন্য বহুবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদে গেলে কার্ড হয়নি বলে জানিয়ে দেন চেয়ারম্যান শাহ আলমসহ পরিষদের অন্য সবাই। তবে তার ওই কার্ডে গত ১২ মাস ধরে টিপসই দিয়ে ভিজিডির চাল তোলা হয়। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ১ বছর পর মানছুরা খাতুনের নামে ইস্যুকুত কার্ডটি তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

চেয়ারম্যান শাহ আলমের যোগসাজসে এই অনিয়ম করা হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই দুজনের নামে ইস্যু হওয়া কার্ড তাদেরকে দিতে গেলে তারা তা গ্রহণ করনেনি। তবে নিজের নামে ভিজিডি কার্ডের বিষয়টি স্বীকার করে মেম্বার শারমিন বলেন, আমি একটু অসচ্ছল তাই কার্ডটি চেয়ারম্যান সাহেব করে দিয়েছেন।

করোনায় দুস্থ ও অসহায়দের জন্য সরকারি বরাদ্দের খাদ্য সামগ্রী বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমের কাছে এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কথা বলতে হলে আমার সামনা সামনি আসা লাগবে। উপজেলা পরিষদে জরুরি মিটিংয়ে আছি এখন কথা বলতে পারবো না।

আরও পড়ুন :
চলছে লুকোচুরি, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল!
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্য চালু
লক্ষ্মীপুরে মেডিকেল কলেজ ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। তিনি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কর্মচারীর নিজ নামে ভিজিডিসহ এ ধরনের কার্ড ইস্যু করার নিয়ম নেই। যতোই অসচ্ছল হোক এটি আইনসম্মত নয়। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।