ভয়ানকভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগী, দুই দিনে শনাক্ত ২৫

দ্রুত আরএনএ আইসোলেশন কিট সরবরাহের চেয়েছেন যবিপ্রবি‘র ভিসি

যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়ানকভাবে বেড়েছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবারের টেস্টে) এ অঞ্চলে সাত জেলা যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রাপ্ত ৮৪ টি নমুনা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে করা পরীক্ষায় আরও ১২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর মঙ্গবারে ৬৫ টি নমুনা টেস্টে ১৩ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলাগুলোয় দুই দিনে মোট ২৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করলো যবিপ্রবি। আর খুলনা মেডিকেলের ল্যাব থেকে আরো কয়েকজনের শরীরে এই মারণব্যাধির অস্তিত্ব ধরা পড়ে।

এর আগে গত সোমবার (২০ এপ্রিল) পর্যন্ত নমুনা টেস্টে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চালের চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, নড়াইল এবং বাগেরহাটে একজন করে করোনা রোগীর সন্ধান মেলে। কিন্ত গত দুই দিনে করোনা রোগী শনাক্তের আনুপাতিক হার হঠাৎ এত বেশি পরিমাণে হওয়ায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে সংশয় ও ভীতি।

গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) থেকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা সন্দেহ ভাজন রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রথম চার দিনে ২০৪ টি নমুনা টেস্ট করা হলেও সেগুলোতে একটিও পজেটিভ রিপোর্ট আসেনি। কিন্তু মঙ্গলবার পঞ্চম দিনে ৬৫ টি নমুনা টেস্টে হঠাৎ করে ১৩ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। বুধবারে ৮৪ টি নমুনা টেস্টে ১২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলে।

যবিপ্রবির ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ও জেনোম সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ২২ এপ্রিল সাত জেলা থেকে ২৩৪টি নমুনা এসেছিল। এরমধ্যে ৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নমুনা থেকেই ১২ জনের নমুনা পজিটিভ এসেছে। দুটি জেলার এস সি আর ফর্ম না আসায়, নমুনাগুলো টেস্ট করা হয়নি। ফর্ম আসলে সেগুলোও টেস্ট করা হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘন্টায় (২২ এপ্রিল দুপুর ২ টা থেকে ২৩ এপ্রিল দুপুর ২ টা পর্যন্ত) যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার থেকে ৮৪টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া হয়েছে এতে যশোরের ২ জন, চুয়াডাঙ্গার ৬ জন, কুষ্টিয়ার ২ জন, মাগুরার ১ জন, মেহেরপুরের ১ জনসহ মোট ১২ জনের নমুনা পজিটিভ এসেছে।

এর আগে গত ২১ এপ্রিল দুপুর ২ টা থেকে ২২ এপ্রিল দুপুর দুইটা পর্যন্ত এ অঞ্চলের সাত জেলা থেকে আগত ৬৫ নমুনার ১৩ টি করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মধ্যে যশোরে ৪ জন, নড়াইলে ৫ জন, কুষ্টিয়া ২ জন, মেহেরপুর ১ জন এবং মাগুরা ১ জন ছিল। নড়াইলে আক্রান্তের পাঁচ জনের মধ্যে চারজনই চিকিৎসক বলে জানা যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) দায়িত্ব দিয়েছি তারা করোনা পজিটিভ রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাদের কন্টাক্ট এরিয়া অর্থাৎ তারা কতদূর পর্যন্ত চলাফেরা করেছে সে সমস্ত এলাকা লোকডাউন করা হবে।

নমুনা টেস্টে আক্রান্তের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এই অঞ্চলের যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও নড়াইলে করোনাভাইরাস বেশি ছড়িয়েছে। অন্যদিকে, এ অঞ্চলের ঝিনাইদহ জেলায় কোন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি।

এদিকে, যবিপ্রবির উপাচার্য জানিয়েছেন, সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আরএনএ আইসোলেশন কিট সরবরাহ করেনি। এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের আরএনএ আইসোলেশন কিট পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেহেতু এখানে জেনোম সেন্টার রয়েছে, তাই রি-এজেন্টও থাকে। দ্রুত আরএনএ আইসোলেশন কিট সরবরাহের দাবি জানিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, না হলে এখানে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এপ্রিল ২৩, ২০২০ at ১৮:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আক/তআ