কর্ণফুলীর ৫ ইউনিয়নে ২২৫০ পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ!

দেশব্যাপী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ঘরবন্দি দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যার ফলে হতদরিদ্রদের মধ্যে চাউল বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যার সুফল চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে কর্মহীন হতদরিদ্ররা পাওয়ার কথা কিন্তু গুটি কয়েকক দলীয় নেতাদের অনিয়মের কারণে সরকারের সদিচ্ছার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

জনপ্রতি ১০ কেজি চাউল দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা না মেনে ৫ কেজি করে চাউল দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়ার কথা বলা হলেও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, স্বল্প আয়ের মানুষের কথা ভেবে সরকার কর্ণফুলী উপজেলায় ৩৫০ পরিবারকে ৩.৫ টান চাউল ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৮ লক্ষ টাকার ত্রাণ বিতরণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিলেও বিতরণে কম দেওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে। উপজেলার মোমেনা বেগম বলেছেন, ‘৫ কেজি নয়, ১০ কেজি চাউল পেলে উপকার হত।’ জুলধা ডাঙ্গার চরের ছেনোয়ারা বলেন, ‘আমি স্বামী পরিত্যক্তা। মা বাবাসহ পরিবারের সদস্য ৬ জন। ৫ কেজি চাল ক’দিন চলে। ফ্যাক্টরীতে কাজ করে সংসার চালাতাম। এখন বের হতে পারি না, ত্রাণও পাচ্ছি না।’

হতদরিদ্ররা বলছেন, জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে জনপ্রতিনিধিদের উচিত নিজেদেরও অর্থ খরচ করে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। তা না করে সরকার ও মন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ বিতরণেও অনিয়ম করছে। জনগণকে ত্রাণ কম দিয়ে আখের গুছাতেই ব্যস্ত গুটিকয়েক নেতা। জানা যায়, এসব ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী।

অন্যদিকে, উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের কোনো আয়-রোজগার না থাকায় নিম্নবিত্ত মানুষদের ত্রাণই এখন একমাত্র ভরসা। কিন্তু এমন সময়ে অসহায় মানুষদের ত্রাণ কম দেওয়া হচ্ছে। অনিয়ম- স্বজনপ্রীতি আর নানা কারসাজিতে ত্রাণের চাউল নিয়েও কর্ণফুলীতে যেনো চলছে ‘চালবাজি’!

এমনকি ত্রাণ নিযয়ে চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও নানা মন্তব্য। সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হলেও অনিয়মের ফলে ত্রাণের সুবিধা থেকে বাদ পড়েছে বেশির ভাগ অসহায় পরিবার।

জানা যায়, গত ৩০ মার্চ উপজেলা পরিষদে ৫টি ইউনিয়নে ওয়ার্ড ভিত্তিক মোট ২২৫০ টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতে চাউল ৫ কেজি, তেল আধা কেজি, আলু ২ কেজি, পেঁয়াজ ১ কেজি, লাইফবয় সাবান ১টি। ফলে উপজেলার স্যোসাইল মিডিয়া ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের টাইম লাইনে একটা বার্তা ট্রল করছে। পাইকারি দরদামে কিনলে চাউল ৫ কেজি ১০০ টাকা, তৈল ৫০০ গ্রাম ৫০ টাকা, আলু ২ কেজি ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ১ কেজি ৩০ টাকা, সাবান ১টি ৩০ টাকা। মোট জনপ্রতি ২৮৫ টাকা। পাঁচ ইউনিয়নে মোট পরিবার ২২৫০টি। তাহলে মোট খরচ : ২২৫০ গুণ ২৮৫ = ৬,৪১,২৫০ টাকা। দেখা যায়, মন্ত্রী দিয়েছেন = ৮ লক্ষ টাকা। সরকারী বরাদ্দকৃত চাউল বিক্রি করে পেলেন ৭০ হাজার টাকা (৩.৫ টন চাউল)
তাহলে বাদ বাকি ২,২৮,৭৫০ টাকা কার হাতের তালুতে বন্দি?

জানতে চাইলে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক ভাবে পাঁচ ইউনিয়নের যে তালিকা করা হয়েছিল তাদের ত্রাণ দিয়েছি। সরকার প্রচুর বরাদ্দ রেখেছে। কর্ণফুলীতে আরো অনেক চাহিদা রয়েছে সেটা সত্য। তবে উপজেলা পরিষদ সমন্বয় করে সব ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।’ উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীকে একাধিক বার রিং করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তাই মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রতিটি উপজেলায় জনসংখ্যা অনুযায়ী যথেষ্ট ত্রাণ দিচ্ছেন। সুতরাং হতদরিদ্রদের চাল বিতরণের চাল নিয়ে কেউ অনিয়ম করে থাকলে জানাতে পারেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংবাদদাতা: মামুন খাঁন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: তারিখ ৬ এপ্রিল