সরকারি নির্দেশ উপেক্ষিত: বেনাপোল বন্দর দিয়ে ফিরেছেন দেড় শতাধিক নাগরিক

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতে সম্পূর্ণ লকডাউন জারি হওয়ার কারণে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশী নাগরিকরা সেদেশে আটকা পড়েছেন। বাংলাদেশ সরকার তাদের এখন যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। এরই মধ্যে গত তিন দিনে দেড় শতাধিক বাংলাদেশী নাগরিক যশোরের বেনাপোল আর্ন্তজাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে দেশে ফিরেছেন।

 

শুক্রবার ছোট ছোট কয়েকটি ভাগে বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে আসেন ৭৯ জন বাংলাদেশী নাগরিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ভারতের পেট্রাপোলের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বাংলাদেশে আসেন। এরা সকলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকারের ঘোষিত ‘লকডাউনে’ কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে আটকা পড়েছিল।

এর আগে এ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বৃহস্পাতিবার ৪৫ জন ও বুধবার ৩৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক দেশে ফেরেন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনের শর্ত দিয়ে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্য অনুসারে, ভারতে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি আটকা পড়েছে। এরমধ্যে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাদেরকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

তবে সেই সঙ্গেই আরও বলা হয়েছে, যদি কোনও একটি শহরে একসঙ্গে অনেক বাংলাদেশী আটকা পড়ে থাকেন এবং তারা নিজের খরচে ও কোয়ারেন্টিনের শর্ত মেনে দেশে ফিরতে রাজি থাকেন তাহলে তাদের ফেরানোর রাস্তা খোঁজা যেতে পারে, যদিও তাতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।

একটি সূত্র জানিয়েছেন, গত ২৪ মার্চ থেকে ভারতে লকডাউন শুরু থেকে যারা ফিরছেন তাদের সবাই পশ্চিমবঙ্গে আটকে পড়াছিল। দুই দেশের দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলাপ-আলোচনার পর তাদের বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে, মোদি সরকার ভারতে ‘জনতার কারফিউ’ ডাক দিলে গত ১৩ মার্চ থেকে ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশিদের। এরপর ২৬ মার্চ থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে উভয় দেশের যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এতে আটকে থাকা বাংলাদেশিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে বা বেড়াতে গিয়ে ভারতের অন্যান্য প্রদেশে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা যে কোন উপয়ে দ্রুত দেশে ফিরতে চায় কারণ ভারতে তাদের জন্য এখন প্রতিটা দিন কাটানোই খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে। মুলত, ভারত তাদের সীমান্ত সিল করে দেশে আন্তর্জাতিক বিমানের ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করার পর প্রায় দুসপ্তাহ কেটে গেছে। এর মধ্যে ব্রিটেন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র বা কাতারের মতো বেশ কয়েকটি দেশ বিশেষ ফ্লাইটে করে তাদের আটকে পড়া নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও বাংলাদেশ সে রকম কোন সিদ্ধান্ত না নেয়ায় আটকা পড়ারা দুশ্চিন্তায় আছেন।

কিন্তু দক্ষিণ ভারতে ভেলোরের সিএমসি-তে নিকটাত্মীয়র চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া রাজু আহমেদ গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের পক্ষে প্রতিটা দিন কাটানোই এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। রাজু বলেন তিনি তার ছোট কাকার অপারেশন করাতে গিয়েছিলেন কিন্তু সে সব মিটে যাওয়ার পর এখন মহা বিপদে আছেন। পেশেন্টের ঠিকমতো যত্ন করতে পারছি না, লকডাউনে দোকানপাট প্রায়ই বন্ধ থাকায় জিনিসিপত্রও ঠিকমতো পাচ্ছি না। রান্না জানি না, এর মধ্যেই কোনও ক্রমে রান্না করে কাকাকে খাওয়াচ্ছি। রাজু আরোও বলেন, ভেলোরে এরকম বাঙালির সংখ্যা অনেক, তাদের সঙ্গে তার কথাও হয়েছে, সবাই নিজ খরচ দিতেও রাজি আছে। কিন্তু সরকার আমাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ারর একটা ব্যবস্থা করুক।

ভেলোর ও নিকটবর্তী মেট্রো শহর চেন্নাইতে এভাবে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশীর সংখ্যাই কম করে শ’পাঁচেক হবে বলে তারা জানাচ্ছেন।

এদের মধ্যে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে স্বামীর ও নিজের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন ঢাকার রোজিনা আখতার তিনিও নিজের দেশের সরকারকে আর্জি জানাচ্ছেন যে কোনওভাবে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হোক এবং তারা সবাই মিলে এর খরচ দিতেও প্রস্তুত।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফেরা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে অধিক কড়াকড়ি ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তবে তাদের কারও দেহে উচ্চতাপমাত্রা বা করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তাদেরকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষাকালে তাদের হাতে বিশেষ চিহ্নিতকরণ লাল সিল দেওয়া হয়েছে।

বেনাপোল পুলিশ ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবিব বলেন, ‘ভারত থেকে আসা বাংলাদেশিদের বাড়ি যশোর, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারিপুর, বাগেরহাট, পিরোজপুর, মুন্সীগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে প্রত্যেকের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর রাখা হয়েছে।’