করোনা: সচেতনতার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে

করোনা ভাইরাসের (কোভিড ১৯) থাবায় গোটা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ অবরুদ্ধ। চীন শুরু হয়ে ভাইরাসটি তার আওতা বাড়াচ্ছে দ্রুত। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই করোনায় আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে।চীনের পর রোগটি এখন ইতালী, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সে তার শক্ত প্রভাব রেখে চলেছে। সেসব দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ এই মুহূর্তে কোয়ারেন্টেইনে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের সব ধরণের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ কিংবা সীমিত করেছে। প্রায় সকল দেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের চলাচল, সমাবেশ সীমিত করা হয়েছে। পবিত্র কাবার তাওয়াফ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ঔষধের দোকান ব্যতীত সব ধরণের দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের দেশেও নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।

পৃথিবীর এমন অবস্থা আগে কেউ কখনো দেখেনি। যেখানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে বিস্তার ঘটিয়েছে করোনা। করোনার কার্যকর কোন টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় সচেতনতাই এর একমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা। হাত ধোয়া, বিশ্রামে থাকা, করোনা রোগীর সংষ্পর্শে না আসা, মাস্ক ব্যবহার করা, গণসমাবেশ বন্ধসহ লকডাউন করা ইত্যাদির পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদিআরবসহ বিভিন্ন দেশে মসজিদে নামাজ পড়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। করুণ এ অবস্থা দেখে মুসলিম বিশ্ব হতাশ হয়ে পড়েছে। আল্লাহ পাক কী দেখাচ্ছেন বিশ্ববাসীকে তা বুঝা দায়। আমাদের অপরাধের শাস্তি আমরাই পাচ্ছি। এ আযাবের জন্য আমরা যেন উপযুক্ত হয়ে পড়েছি। করোনার ভয়ংকর থাবা থেকে রক্ষা পেতে হলে সতর্ক, সচেতন থাকার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে কৃত অপরাধের জন্য বারবার ক্ষমা চাইতে হবে। জুলুম, অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতিসহ যত অপরাধ আমরা এর আগে করেছি তা না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে আল্লাহ্কে। দয়ালু মহান আল্লাহ্ হয়তো এমন প্রতিশ্রুতির কারণে তার গজব থেকে আমাদের মুক্তি দিতেও পারেন। তবে আমাদের প্রতিশ্রুতি হতে হবে অকাট্য। যা ভাংগা যাবেনা। কারণ প্রতিশ্রুতি ভংগের শাস্তি ইতিপূর্বে আল্লাহ্ পাক বিভিন্ন জাতিকে কঠিনভাবে দিয়েছেন। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

আমাদের দেশে রোগটির প্রভাব কম থাকলেও সতর্ক, সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলে সম্ভাব্য সব ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। যতদূর জানতে পারলাম, ইতালী প্রথমদিকে এই রোগটির ভয়াবহতা নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় দেশটিতে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা ও জনগণ সচেতন হওয়া সত্ত্বেও ইতালীর এমন অবস্থা আর আমরাতো সে তুলনায় যোজন যোজন দূরে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সচেতন নয়। তারা দুর্যোগ, মহামারীকে গুরুত্ব দেন কম। সে কারণে আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে আগেভাগেই। এর কোন বিকল্প নেই। রোগের আক্রমণের জন্য বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। জনগণকে সরকারের নেওয়া এসব পদক্ষেপকে সহযোগিতা করতে হবে। মানুষের জন্য চিকিৎসা উপকরণ সহজলভ্য করতে হবে। খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির যেন কোন সংকট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। সকল অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশকে করোনাসহ যেকোন মহামারী থেকে মুক্ত রাখতে এসব পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। করোনার প্রকোপ কমে এলে বা আশংকা না থাকলে ধীরে ধীরে পদক্ষেপগুলো শিথিল করা যাবে। তবে এই মুহূর্তে অবশ্যই যেকোন কঠিন পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করা যাবেনা। কালক্ষেপনের কোন অবকাশ নেই। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যপারে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

সংক্রমনের অপেক্ষায় থাকার কোন সুযোগ নেই। আসুন, আমরা সকলে দেশ ও জাতির সুস্থতার জন্য এবং নিরাপদে থাকতে নিজ নিজ স্থান থেকে ভূমিকা রাখি, সচেতন হই।

মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। তিনি যেন আমাদের এ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেন। আমিন

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

দেশদর্পণ/একেএন/এসজে