ইতালির চিঠি

লেখক- ইমাউল হক, পিপিএম
পুলিশ পরিদর্শক ।

Dear Doctor

সালাম রইল। আপনার চিকিত্সা পত্রে লেখা ছিল next visit after 70 days । অনেক কষ্ট করে Lombardi আসলাম। আজ তিন দিন হোটেলে। আপনার চেম্বারে তিন দিন ই আসলাম পেলাম না। সময় বেশি নেই কারন তিন মাসের বেশী হলে নতুন রোগী বলে গণ্য হবে।

আর এমনিতে এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। সর্দি, কাশি আর জ্বর জ্বর ভাব। ভাবলাম আগের গলা ব্যথা টা দেখাব সাথে জ্বরের চিকিত্সা ও নিব।
আপনার পিওনকে সিরিয়াল দিতে ফোন করলাম। সে বলল স্যার এখন রোগী দেখা বাদ দিয়েছে। কারন এখন রোগী দেখলে ডাক্তারের নাকের ভিতর ভাইরাস ঢুকে ডাক্তার মারা যায়।

আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। কারন আপনি অনেক কঠিন রোগে আমার ও পরিবারের চিকিত্সা দিয়েছেন। আপনি মহান পেশার আদর্শ। তাছাড়া আপনি ছাড়া অন্য কারোর চিকিত্সা মন মত হয়না। আর আপনার সেবা দেখে আমার ছেলে মেয়েকে ডাক্তারি ভর্তি করেছি। আপনাকে তারা অনুসরণ করবে। শুনেছি চীন দেশে এক ভাইরাস আসছে। সেটা ধরলে একমাত্র বুঝতে পারে ডাক্তার। আর ডাক্তার ছাড়া কেউ এই রোগীর কাছে যেতে পারে না। আমার শরীরে জ্বর বেশী। কাশিও প্রচন্ড। এই চিঠি আর আমার ফোন নম্বর আপনার চেম্বারে রেখে গেলাম। আমি পাশের হোটেলে আছি। চেম্বারে আসলে আমাকে সংবাদ দিবেন।

ভাগ্য রুটিন এমন ই হয়। আর সেটা কেউ তৈরি করে না। কারো কারনে নয় তখন মানুষ কপাল দোষে দুষ্ট হয়। কিছুই করার নেই। দেরিতে আসলে সেদিন ই ট্রেন আগে যায় । তারাই হতভাগা। রোগী যখন বেশি অসুস্থ তখন ডাক্তার ই যদি রোগে আক্রান্ত হয় তখন মনের জোর কবরে যায়। নিরাকারের প্রতি চেয়ে থাকা ছাড়া কোন আর্তনাদ করে লাভ হয় না।

ইতি পূর্বের একটি করোনা রোগী দেখে ডাক্তার সাহেব কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। ১৪ দিন পরে ডাক্তার সাহেব চেম্বারে ঝুলানো এই চিঠি দেখে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন। the phone you dialled, is switched off. ডাক্তার অঝোরে কাঁদতে ছিলেন। ডাক্তার তাঁর পিওনকেও অপপ্রচার করার জন্য বরখাস্ত করলেন। এবং সেদিন থেকে করোনা র যে রোগীকে চিকিত্সা দিলেন সেই সুস্থ হল। আমার বন্ধুও সুস্থ হয়েছে। এবং সেই এই মহৎ পেশার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই ঘটনা প্রকাশ করেছে।

এমন মহান ডাক্তার খুবই দরকার।

লেখক-
ইমাউল হক, পিপিএম