করোনা: নিত্যপণ্য মজুদের হিড়িক

গত ডিসেম্বরে চীনে হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। বিশ্বের অন্তত ১৭০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ১৪ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, মারা গেছেন একজন। প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলেছে। বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে চলমান ও অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্যমেলা। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠান অফিসে না এসে ঘরে বসেই কাজ করার নির্দেশনা দিচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে আরেকটি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে- এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনজীবনে। আর তাই নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য দ্রব্য বেশি বেশি মজুদের হিড়িক পড়েছে। এই ‘সুযোগে’ অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা মো. জামান। মুগদা বাজারে এসেছেন চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে। ২০ কেজি ওজনের পাঁচ বস্তা চাল, ১০ লিটার তেল, ১০ কেজি পেঁয়াজসহ বেশ কিছু পণ্য কিনেছেন তিনি। বিল এসেছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা। একসঙ্গে এতো টাকার বাজার কেনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবসময় এক সপ্তাহের বাজার কিনি। এবার একটু বেশি কিনলাম। কারণ যেভাবে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, দোকান-পাট বন্ধ হলে গেলে কী করবো? তাই একসঙ্গে কিনে রাখলাম।

একইভাবে রাজধানীর বিজয়নগরের একটি চেইন সুপার শপ থেকে বাড়তি বাজার করে রাখতে দেখা যায় সাব্বির আহমেদ নামে একজনকেও। তিনি চাল, ডাল, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্য কিনেছেন, যার বিল হয়েছে প্রায় সাত হাজার টাকা। তিনিও জানান, করোনাভাইরাসের আতঙ্কেই বাড়তি কেনাকাটা করে রাখছেন।

শুধু জামান আর সাব্বির নন, রাজধানীর অনেকেই করোনাভাইরাসের আতঙ্কে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনে মজুদ করে রাখছেন। গত ক’দিনে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, মুগদা, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজার ও চেইন সুপার শপগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: করোনা: পেছাতে পারে এইচএসসি

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে ১৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে, প্রাণ গেছে একজনের। দেশের বিভিন্ন জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন প্রায় দুই হাজার মানুষ। দিনে দিনে এ সংখ্যা বাড়ছে। এতে বাড়ছে আতঙ্ক। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলে হাট-বাজার, সুপারশপ, শপিংমলসহ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ আতঙ্কে মানুষ পূর্বপ্রস্ততি হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে মজুদ করছেন।

সেগুনবাগিচা এলাকায় আগোরা ও বিজয়নগরের স্বপ্ন সুপার শপের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেদিন (৮ মার্চ) দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, সেদিন থেকেই বেচা-বিক্রি বেড়েছে। তবে গত কদিন ধরে বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পণ্য কিনে বাড়িতে মজুদ করছেন অনেকে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের কারণে বাজার, সুপারশপ, শপিংমল ও দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গেছে। মিডিয়ায় খবর আসছে, তাই আতঙ্ক থেকেই ভোক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ফেলছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারশপ স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে নিত্যপণ্যের বেচা-বিক্রি বেড়েছে। এটি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০-১৫ শতাংশ বেশি হবে। এর মধ্যে চাল, ডাল এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিস্যু জাতীয় পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দেশের জন্য কি করতে পারি?

চাহিদা বাড়লেও সরবরাহে ঘাটতি এখনো হয়নি উল্লেখ করে সাব্বির হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত সরবরাহে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এভাবে মানুষ পণ্য কিনে বাসায় মজুদ করলে পরে এক সময়ে স্টক শেষ হয়ে যাবে। কারণ পণ্য উৎপাদনের একটি নির্দিষ্ট সীমা ও পরিকল্পনা থাকে, সেই অনুযায়ী পণ্য উৎপাদিত হয়।

স্বপ্নের এ কর্মকর্তা বলেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। আগামী দিনে যদি জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে সরবরাহের সমস্যা হবে। তাই আগামীতে যেন চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি না হয়, এজন্য বেশ কয়েকটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু কিছু পণ্য যেগুলোর চাহিদা বেশি রয়েছে, সেগুলোর উৎপাদন যেন বাড়ানো হয়। পাশাপাশি ক্রেতারা যেন অতিরিক্ত পণ্য না কেনেন এবং ব্যবসায়ীরা যেন মজুদ করে সংকট সৃষ্টি না করেন, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাজধানীর মুগদার মুদি ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, আগে এক বস্তা পেঁয়াজ দুদিনে বিক্রি করতাম। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন দুই তিন বস্তা বিক্রি হচ্ছে। চাল, ডাল, আটা, তেল, নুডলস, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে চাল কেজিতে ৩-৪ টাকা বাড়লেও বাকি পণ্য আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

দেশদর্পণ/এসজে