প্রভাবশালীদের পেটে যাচ্ছে করতোয়া নদীর বালু

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধিসহ পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। উপজেলার বোয়ালিয়া নামক এলাকায় এক লাখ ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ পোলের একশ’ গজ দুরত্বেই বসানো হয়েছে তিনটি ড্রেজার মেশিন। ফলে যে কোনো সময়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।

জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ মেরি, চকরহিমাপুর উত্তরপাড়া, চকরহিমাপুর কামারপাড়া, পলুপাড়া ব্রীজ, খলসি মিয়াপাড়া, বোয়ালিয়া, কাটাখালী ব্রীজের পূর্ব পার্শে¦, সুন্দইল, সমশপাড়া, বড়দহ ব্রীজসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বসতবাড়ীসহ আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও বালুদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায় সাড়া অভিযান মাঝে মধ্যে চললেও বর্তমানে তা রহস্যজনক কারণে বন্ধ রয়েছে। ফলে বালুদস্যুরা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের অবৈধ কারবার অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন: অধিনায়কত্ব ছাড়লেন মাশরাফি

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, স্থানীয় এমপির সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী লিটন, সাবেক জেলা যুবলীগ নেতা আলতামাসুল ইসলাম প্রধান শিল্পী, তালুককানুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক, চোরাচালান মামলার অন্যতম আসামী এবং বর্তমানে আনন্দ টিভির গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি পরিচয়দানকারী উজ্জ্বল হক প্রধানসহ একটি সিন্ডিকেট বালু কারবারের সাথে জড়িত। উজ্জ্বল জেল থেকে জামিনে এসে সাংবাদিকের তকমা লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজীসহ বালু সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের মধ্যে একজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারি দলের ছত্রছায়ায় ওই বালু সিন্ডিকেটটি তাদের অবৈধ কারবার চালাতে কোথাও বাধাগ্রস্ত না হওয়ায় সাধারণ কৃষকরা সহ অনেক বাড়ি ঘরের মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে ভিটে-মাটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়া লোকজন এখন সবকিছু হারিয়ে অসহায় জীবন-যাপন করছে।

বালু সিন্ডিকেটের সাথে যারা সহযোগিতা করছে বোয়ালিয়ার দেলোয়ারের ছেলে আপেল, ছাত্তার, বেলাল, সুমন, মছির ও ফুলবাড়ি ইউপি সদস্য পাশা মেম্বরসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি। এরা স্থানীয় লোকজনদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো সহ মারধর ও করে থাকে। এদের ভয়ে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হলেও প্রতিবাদ করতে পারে না।
আরও পড়ুন: ৫ হাজার প্রজাতির গাছ দিয়ে তৈরী এই গাছবাড়ি

সরেজমিনে দেখা গেছে, এরা বালু উত্তোলনের পয়েন্ট গুলোতে পাহাড়া দেয়। দিনরাত তারা সেখানেই অবস্থান করে। অবস্থান কালীন সময়ে তারা জুয়ার আসর বসানো সহ নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত করে থাকে। এসব ঘটনা সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে ডিসি স্যারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় এমপির সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী লিটন জানান স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এর সাথে জড়িত এখানে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আলতামাসুল শিল্পী বলেন, নিউজ করলে আমার করার কিছু নেই।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, সিসি ব্লকের পাশ থেকে বালু উত্তোলন ও বাধ কেটে রাস্তা তৈরী করে বালু বহনকারী গাড়ী চলাচল করছে। উক্ত ঘটনায় আমরা উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

দেশদর্পণ/এসকেবি/এসজে