মুকুলে ভরে গেছে গাছ, ভাল ফলনের আশায় চাষীরা

যশোরের চৌগাছায় এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন এই উপজেলার হাজারো আম চাষিরা। চলতি মৌসুম শুরুতেই প্রতিটি গাছে মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে। আম চাষিরা ধারণা করছেন এই বছর গাছ গুলোতে যে পরিমান মুকুল দেখা দিয়েছে, তাতে করে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে।

উপজেলার জগদীশপুর, পাতিবিলা, নারায়নপুর, স্বরুপদাহ ও সুখপুকুরিয়া, চৌগাছা ইউনিয়নসহ অধিকাংশ ইউনিয়নের গ্রামগুলো আম চাষের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। এমন এক সময় ছিল এ অঞ্চলের মানুষ বাড়ির আঙিনায় কিংবা পতিত জমিতে যেনতেন ভাবে আম গাছ লাগাতেন। কিন্তু সময়ের পালাক্রমে এখন আম বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। চৌগাছার উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী টাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে রপ্তানী হচ্ছে। আম পাকার মৌসুম এলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আম ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন চৌগাছায়। তারা উপজেলার বিভিন্ন বাগানে বাগানে ঘুরে পছন্দের মত আম কিনে তা ট্রাক লোড দিয়ে নিয়ে যান বিক্রয় করার জন্য। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে চৌগাছাতে বর্তমানে ৮৫০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হিমসাগর ৩৪০ হেক্টর, ন্যাংড়া ৯৫ হেক্টর, আ¤্রপলি ৩৮০ ও স্থানীয় জাত ৩৫ হেক্টর। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে আম চাষ অন্য সব সময়ের থেকে দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ফাগুনে চোখ ধাঁধানো শিমুল ফুল

জগদীশপুর গ্রামের আম চাষি রোকনুজ্জামান বাবু জানান, তিনি ১২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করেছেন। এরমধ্যে আ¤্রপলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি উল্লেখযোগ্য। গত তিন বছর ধরে তার বাগান থেকে আম বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছরে প্রতিটি বাগানের আম গাছ গুলো মুকুলে ভরে গেছে। আম চাষি রোকনুজ্জামান বাবুর মত ওই মাঠে অনেকেই বানিজ্যিক ভাবে আম চাষ করেছেন। যে দিকে নজর যাই সেদিকেই দেখা মিলবে আম গাছের। এখন মুকুলের সময় তাই মাঠ জুড়ে মুকুলের মৌ মৌ সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন আম চাষিরা। সূত্র জানায়, স্থানীয় জাতের আমের পাশাপাশি আ¤্রপলি, হিমসাগর, ন্যাংড়া, ফজলি আমের ঐতিহ্য দীর্ঘ দিনের। কিন্তু গত তিন দশকে কৃষি ও ফল বিজ্ঞানীরা আমের নতুন নুতন জাত উদ্ভাবন করে আমে এনে দিয়েছেন নিত্য নতুন স্বাদ, গন্ধ ও রং। এ সব আমের চাষ করে অনেক চাষিই আজ স্বাবলম্বি। দেশের বিভিন্ন জেলাতে নতুন নতুন জাতের আমের চাষ হলেও চৌগাছা এলাকাতে নতুন জাতের আম চাষ সেভাবে বিস্তার লাভ করেনি।

ফল বিজ্ঞানীদের মতে, সারা পৃথিবীতে মোট ৩৫ প্রজাতির আম রয়েছে। বাংলাদেশের ফল বিজ্ঞানীরাও গত তিন দশকে ১০টির অধিক আমের উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছেন। বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারি জাতের আম চাষেও ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। আমের পুষ্টি উপাদান অনেক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, মৌসুমী ফল আম খেলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। কারণ আমে ফসফরাস, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম আছে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য আম বিশেষ উপকারী ফল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন জানান, চৌগাছায় দিনদিন আম চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আম চাষ করে অনেকেই আজ স্বাবলম্বি। সেকারনে মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এই চাষ বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুন হয়েছে। আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত আম নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষি অফিস আম চাষিদের এ বিষয়ে নানা পরামর্শ প্রদান করে আসছেন বলে তিনি জানান।

দেশদর্পণ/এমআই/এসজে