ধুঁকে ধুঁকে চলছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটি।জনবল ও চিকিৎসক সংকট, নষ্ট ও অকেজো চিকিৎসা যন্ত্রপাতিসহ অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ায় ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। তবে এসব ব্যপারে বরাবরের মতোই বরাদ্দ সংকটকে দুষছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।সর্বশেষ গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করে দেয় গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালটির ৫১ মাসের গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় বিছিন্ন করে দেওয়া হয় গ্যাস সংযোগ।

হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার কারণে সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি গ্যাস বিল। এছাড়াও বরাদ্দ ঘাটতির কারণে বিদুৎ বিলও বকেয়া রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হাসপাতাল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনও বকেয়া রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালটির সাবেক এক তত্ত্বাবধায়ক জানান, বিগত সময়ে হাসপাতালটির বকেয়া ছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকা। যা পরে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে পরিশোধিত হয়।
আরও পড়ুন: বেহুঁশ অবস্থাতেই মা-মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা!

এছাড়াও ৫১ মাসের বর্তমান বকেয়া গ্যাস বিল প্রায় ৮ লাখ ৬২ হাজার টাকার বিপরীতে গ্যাস খাতে বিল বরাদ্দ হয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। যা ব্যাংকের মাধ্যমে কেজিডিসিএল বরাবর পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিনে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন থাকার কারণে প্রায় ২০০ রোগীর রান্না হচ্ছে লাকড়ি দিয়ে।

হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা ও খাদ্য ইনচার্জ চায়না রাণী শীল জানান, ‘শুধু মাত্র গ্যাস সংকট নয়। হাসপাতালের রোগীদের খাবার সরবরাহ করার কাজে নিয়োজিত মাত্র ১ জন বার্বুচি আছে। অথচ দিনে ৩ শিফটে প্রয়োজন কমপক্ষে আরো ২ জন বাবুর্চি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, বরাদ্দ সংকটে বেসামাল হয়ে ওঠা হাসপাতালের রান্নাঘর সামাল দিতে খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয় নুরুল আলম নামের ১জন বাবুর্চিকে।

নুরুল আলম বলেন, ‘গত ৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। পরিবার পরিজন ও ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
আরও পড়ুন: চসিক নির্বাচন: বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী যারা

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার নাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বাৎসরিক ৪ ধাপে আমাদের হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ আসে। কিন্তু সব খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার কারণে অনেক খাতেই বিল বকেয়া থাকছে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের সেবা খাত বিবেচনায় হাসপাতলাটির বাৎসরিক বরাদ্দ আসে ১০-১২ কোটি টাকা। কিন্তু হাসপাতালের প্যাথলজি, আউটডোর এবং বেডে ভর্তিসহ এই তিন উৎস থেকে হাসপাতালটির আয় হয় প্রায় ১ কোটি টাকা। ফলে বছরে ৮-১০ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

অন্যদিকে এই বিশাল পরিমাণ লোকসান সামাল দিতে সরকারি সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘ছোট-বড় অনেক অপারেশন এই হাসপাতালে হয়ে থাকে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে এসব অপারেশন করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় এই হাসপাতালে সেই অর্থ ব্যয় হয় না। অর্থাৎ সেবা খাত বিবেচনায় সরকারি ভর্তুকিতে চিকিৎসা চলছে।

দেশদর্পণ/এমএম/এসজে