সড়ক দুর্ঘটনায় জাতীয় হ্যান্ডবল দলের গোলরক্ষক ভাইসহ নিহত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় জাতীয় হ্যান্ডবল দলের গোলরক্ষক সোহানুর রহমান সোহান তার চাচাত ভাইসহ নিহত নিহত হয়েছেন। অবৈধ ইঞ্জিন চালিত স্টিয়ারিং গাড়ি ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তারা নিহত হন।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ সেন্টার মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে একজন ঢাকায় নেয়ার পথে এবং অপরজন হাসপাতালে মারা যান।

নিহতরা হলেন, উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চর বাহিরমাদি এলাকার কালু মিস্ত্রির ছেলে সোহানুর রহমান সোহান (২৪) ও সাইদুল ইসলামের ছেলে ইসমাইল হোসেন জয় (২২)। নিহত সোহান জাতীয় হ্যান্ডবল দলের গোলরক্ষক ছিলেন। তার চাচাত ভাই জয় যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

প্রতক্ষদর্শীরা জানান, কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের হোসেনাবাদ সেন্টার মোড়ে দ্রুতগামী একটি অবৈধ ইঞ্জিন চালিত স্টিয়ারিং গাড়ি ও তাদের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। একটি যাতীবাহী বাসকে অতিক্রম করতে গিয়ে সংঘঠিত এ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলটির সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী দুজনই গুরুতর আহত হন। মোটরসাইকেলটির চালক গোলরক্ষক সোহানের ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

দুর্ঘটনার সময় স্থানীয় হোসেনাবাদ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই কবির হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিহ হয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। তাদের মধ্যে সোহানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে দুপুরের দিকে রাজবাড়ীর কাছে তিনি মারা যান। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় বিকেলে জয়ের মৃত্যু ঘটে।

দৌলতপুর থানার অ্রফিসার ইনচার্জ এসএম আরিফুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ইঞ্জিন চালিত স্টিয়ারিং গাড়িটির চালক পালিয়ে গেছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। নিহত সোহানের মরদেহ রাজবাড়ী জেনারেল হাসপাতাল এবং জয়ের মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয় ।

এদিকে,  রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহত দুজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে বিকেল ৫টার দিকে রাজবাড়ী থেকে সোহানুর রহমান সোহানের মরদেহ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসার ঘণ্টাখানিক পরেই কুষ্টিয়া থেকে সোলাইমান হোসেন জয়ের মরদেহ এসে পৌঁছায়। সে সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অববতারণা ঘটে। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। বাহিরমাদি হাইস্কুল মাঠে দুজনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে অকালেই প্রাণ হারারো দুই ভাইকে সমাহিত করা হয়।

নিহত সোহানুর রহমান সোহানের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি জাতীয় হ্যান্ডবল দলের নিয়মিত গোলরক্ষক ছিলেন। গত ডিসেম্বর মাসে তিনি নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে খেলে এসেছেন। চীনে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু দেশটিতে করোনা ভাইরাসে বহু মানুষ মারা যাওয়ায় ওই ম্যাচ বাতিল করা হয়। গত কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে ছুটিতে বাড়ি আসেন সোহান। শুক্রবার সকালের দিকে একুশে ফেব্রুয়ারির বিভিন্ন কর্মসূচি ঘুরে ঘুরে দেথার জন্য চাচাত ভাইকে সঙ্গে করে বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি।