সোনারগাঁয়ে উপজেলা আ’লীগের কমিটি কোনটি বৈধ, কোনটি অবৈধ ?

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন কমিটি বৈধ, কোনটি অবৈধ? এমন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। তবে বৈধ কোনটি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্বের কমিটি নাকি জেলার সভাপতি-সাদারণ সম্পাদকের দেয়া বর্তমানর আহŸায়ক কমিটি! পূর্বের কমিটি ভেঙে দিয়ে হঠাৎ করে আহŸায়ক কমিটির ঘোষণা এককভাবে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদল। যদিও সেই আহবায়ক কমিটির ব্যাপারে কেন্দ্রের কোন অনুমতি কিংবা অনুমোদন নেই সূত্রে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতার জোর আপত্তির মুখে বেকায়দায় পড়েন হাই-বাদল। শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বেশ কয়েক দফায় কেন্দ্রে ডেকে নিয়ে হাই-বাদলকে সাফ জানিয়ে দেন বর্তমান আহŸায়ক কমিটির কোন মূল্য নেই, পূর্বের কমিটিই বহাল থাকবে। আহŸায়ক কমিটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের দুরত্ব কমিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলন করেন সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম।

জেলা আওয়ামী লীগেও এই আহŸায়ক কমিটি নিয়ে বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছিলো জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ কমিটির শীর্ষ নেতারা। হাই-বাদলের সাথে আহŸায়ক কমিটি নিয়ে জেলা কিংবা উপজেলা আওয়ামী লীগের কারো সাথেই কোন সুরাহা হয়নি। কথা উঠেছিলো, হাই-বাদলের মাধ্যমে এই আহŸায়ক কমিটি দেয়া হলেও এর নেপথ্যে রয়েছেন প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান। তার প্রেসক্রিপশনেই দেয়া হয়েছিলো বর্তমান এই আহŸায়ক কমিটি। দু’পক্ষের এমন বাদানুবাদে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি-৩ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদলকে ডেকে জানিয়ে দেন সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের বর্তমান আহŸায়ক কমিটি অবৈধ। ভবিষ্যতে এমন আর না করার জন্য তাদেরকে সতর্কও করে দেন তিনি। এছাড়া জানিয়ে দেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যে আহŸায়ক কমিটি বর্তমানে দেয়া হয়েছে সেটি অবৈধ। এক্ষেত্রে পূর্বের কমিটিই বহাল থাকবে বলে তিনি এও জানিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: শিবগঞ্জে সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু: থানায় মামলা

এছাড়া তিনি আব্দুল হাই ও ভিপি বাদলকে বলেন, কোন কমিটি ভাঙার এখতিয়ার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের নেই। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে এটা উল্লেখ রয়েছে। তোমরা এটা ভুল করেছ। আগের কমিটিই বহাল থাকবে। কোন কিছু হলে তোমরা সাংগঠনিক সম্পাদকের (মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল) সাথে কথা বলবে। তবে ভবিষ্যতে আর এমন কোন ভুল করবেনা।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই জানান, ‘সোনারগাঁয়ের কমিটি নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (তৎকালীন) ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন-দু’পক্ষকে নিয়ে বসে নওফেল বিষয়টির সুরাহা করবেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে বিভিন্ন পদে পরিবর্তন হওয়ার পর ও সাংগঠনিক পদে রদবদলের পর সোনারগাঁয়ের আহŸায়ক কমিটিকে বৈধ করার জন্য আবারো জোরালোভাবে মাঠে নামে একটি পক্ষ। তবে এরই মধ্যে ১৯ ফেব্রæয়ারি বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের অধীনে সকল সাংগঠনিক জেলা মহানগরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্যদের সাথে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘এখন থেকে কেন্দ্রের পরামর্শ ছাড়া আওয়ামী লীগের কাউকে বহিষ্কার করা যাবে না। সম্মেলন ছাড়া দলের কোনো কমিটি করা যাবে না। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কোনো কমিটি ভাঙাও যাবে না। কেন্দ্র ছাড়া কেউ কাউকে সরাসরি বহিষ্কার করতে পারবেন না।’
আরও পড়ুন: মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান

ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের। তিনি দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক বক্তব্য দেন। তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহŸায়ক কমিটি যে অবৈধ তা আবারো পুনর্ব্যক্ত হলো। অবশ্য এই আহŸায়ক কমিটি নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। গত ১৫ জুলাই হঠাৎ করেই সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দেন সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল। এরপর সাথে সাথেই তারা শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া আহŸায়ক এবং পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহŸায়ক করে একটি আহŸায়ক কমিটি গঠন করে দেন। ওই আহŸায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা.আবু জাফর চৌধুরী বিরু, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবুকে রাখা হয়। তবে কাউকে না জানিয়ে এই আহŸায়ক কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা। এব্যাপারে তারা কেন্দ্রে ৩৮ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পাঠান। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথেও তারা সাক্ষাৎ করেন।
আরও পড়ুন: চোরাকারবারীর পথ ছেড়ে সোনালী মাঠে সবজি চাষে তারা

তবে প্রচার হয় যে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল দু’জনেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের অনুসারী। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, মূলত শামীম ওসমানের ইন্ধনেই সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, চলতি বছরের ১৬ জুলাই রূপগঞ্জে কাউন্সিলের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীকে এবং ২২ জুলাই কাউন্সিলের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এই দু’জনেরই বর্তমানে এমপি শামীম ওসমানের বিপক্ষে অবস্থান। আর গাজী এবং বাবু দু’জনই মেয়র আইভীকে সাপোর্ট করছেন।

এদিকে এমপি শামীম ওসমানের ধারণা ছিলো-সোনারগাঁয়ে কাউন্সিল হলে আইভী অনুসারীরা নির্বাচিত হবে। আর যেহেতু দীর্ঘদিন থেকে শামীম ওসমান সোনারগাঁয়ের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি চাননি সোনারগাঁ তার হাতছাড়া হয়ে যাক। আর একারণে তিনি তারা অনুগতদের দিয়ে আহŸায়ক কমিটি গঠন করেন। এই আহŸায়ক কমিটি যে শক্তিশালী তা প্রমাণের জন্য আহŸায়ক কমিটির মাধ্যমে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নে সমাবেশের ডাক দেন। কিন্তু ওখানকার যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা একই জায়গায় পাল্টা সমাবেশের ডাক দেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করলে শামীম ওসমানের অনুগত কর্মী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা.আবু জাফর চৌধুরী বিরুর বাড়িতে সমাবেশটি সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানেও কঠিন প্রতিরোধের মুখে পড়ে সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি ভিপি বাদল। নেতাকর্মীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারেনি এই আহŸায়ক কমিটি।

দেশদর্পণ/এসএ/এসজে