প্যারোল কি বেগম জিয়ার রাজনৈতিক আত্মহত্যা হবে?

কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পর্দার অন্তরালে সমঝোতার নানা গুঞ্জন থাকলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আপাতত আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে বিকল্প কিছুই ভাবছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে প্যারোলের বিষয়েই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন শাসক দলের নেতারা।

দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, খালেদা জিয়া অপরাধ ও শাস্তি মেনে নিয়ে সরকারের কাছে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ মুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি বিষয়। তিনি প্যারোলে মুক্তির জন্য সরকারের আছে আবেদন করতে পারেন। তখন সরকার সেটা বিবেচনা করবে। তার আগে এ বিষয়ে তো কিছু বলা যাচ্ছে না।

খালেদা জিয়ার প্যারোলের মুক্তির বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এজন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে। সেখানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে প্যারোলে মুক্তির জন্য কোথায় কীভাবে দরখাস্ত করতে হবে।

রোববার সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে। এজন্য সব নিয়মকানুন মেনে সরকারের কাছে আবেদন করলে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার চিন্তা করা যেতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত দরখাস্ত বা এরকম কিছু পাওয়া না যাবে, ততক্ষণ হাওয়ার ওপরে কথা বলার প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়ে এগিয়ে দেখিয়ে দিল হিন্দুস্তান টাইমস

একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, কীভাবে তারা আবেদন দিয়েছে, সেটা তো আমরা জানি না। সেটা আসার পর হয়তো আলোচনা হতে পারে। তবে তারা (বিএনপি) জামিন বা প্যারোল যেটাই চাইবে, তা আইনের মধ্য থেকেই চাইতে হবে।

প্যারোলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন কোন বিষয়ে প্যারোল দেয়া যাবে, এর সুনির্দিষ্ট কিছু ‘ক্রাইটেরিয়া’ আছে। সেই শর্তগুলো পূরণ করে যদি তারা আবেদন করে, তাহলে সরকার চাইলে সেটা বিবেচনা করতে পারে। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে ‘মানবিক’ বিষয়টি বিবেচনার কথা বলছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানবিক বিষয়টা ‘গভর্নমেন্ট কনসার্ন’ নয়। মানবিক দিকটা সাধারণত কোর্টে উপস্থাপন হয়, সেখানেই বিবেচনা করা হয়।

খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে মুক্তির দাবি জানানো হচ্ছে। বিএনপি বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলন করে মুক্তির কথা বলেছিল। এ বিষয়ে কিছু কর্মসূচি পালন করলেও সরকারের ওপর বড় কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি। পরে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি সামনে এনে ‘মানবিক’ কারণে মুক্তির দাবি জানায় দলটি।

সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ওবায়দুল কাদের শুক্রবার নিজেই বিষয়টি গণমাধ্যমে জানানোর পর ফের এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, খালেদার মুক্তির ব্যাপারে আগের চেয়ে নিজেদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন এনেছে বিএনপি। তবে তা কোনোভাবেই আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে নয়। এ নিয়ে বিএনপিকে রাজনীতির মাঠও গরম করার সুযোগ দেয়া হবে না।
আরও পড়ুন: আন্দোলন করে বেগম জিয়াকে মুক্ত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই: ড. হাছান মাহমুদ

এ বিষয়ে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলতেই পারেন। তার মুক্তির ব্যাপারে আলাপ করতে পারেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে আমি জানাব এটা স্বাভাবিক। এটি রাজনৈতিক শালীনতার বিরোধী নয়।

এখানে গোপনীয়তার কী আছে? মির্জা ফখরুল আবেদন করতেই পারেন। তিনি বলেছেন প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর জন্য, আমি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, অবহিত করেছি। মানবিক কারণে মুক্তি চান, মুক্তি চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। এর কোনো গোপনীয়তা নেই যে ফাঁস করে দিয়ে অন্যায় করেছি। এ বিষয়ে পর্দার অন্তরালে কিছুই নেই, সবকিছু ওপেন বলেও জানান সেতুমন্ত্রী।

একই বিষয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুটি পথ খোলা আছে। একটি হল তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই করে জামিন নিতে হবে। অন্যটি প্যারোলে মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। ওনারা সেটা করেননি।

এদিকে প্যারোল বনাম জামিন নিয়ে বেশ কিছুদিন রশি–টানাটানি হলো। খালেদা প্যারোলে ছাড়া পান, এটা বিএনপি চায় না। প্যারোলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত দেওয়া থাকে। প্যারোলের সময়সীমা কী হবে, সেটা নির্ধারণ করবে সরকার। ওই সময় তিনি যে কারণ দেখিয়ে প্যারোলের আবেদন করেছেন, এর বাইরে অন্য কোনো কাজে জড়িত হতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে তাঁর একমাত্র কাজ হলো চিকিৎসা করা। অর্থাৎ তিনি প্যারোল নিয়ে দেশের ভেতরে বা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, রাজনীতি করতে পারবেন না। প্যারোল দেওয়াটা সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক। তাহলে তাঁরা খালেদা জিয়াকে আপাতত রাজনৈতিকভাবে ছেঁটে ফেলতে পারবেন। জামিন নিয়ে খালেদা জিয়া আবারও যেন রাজনীতির মাঠে সরব না হন, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আমরা আপাতত প্যারোলকেই প্রাধান্য দিচ্ছি।

তিনি (খালেদা জিয়া) প্যারোল নিয়ে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেলে বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। কারণ প্যারোলে মুক্তি পেলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু বাধ্যবাধকতার জন্য তিনি রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না।

দেশদর্পণ/এসজে