ফুলছড়িতে স্কুলের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা উড়িয়া ইউনিয়নের চর কালাসোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গৃহনির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে কাজটি সম্পন্ন করছে। নিম্নমানের কাজের বিষয়ে স্থানীয়রা উপজেলা প্রকৌশলীকে জানালে তিনি লিখিত অভিযোগ ছাড়া এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে পারবেন না বলে জানান।

জানা যায়, ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চর কালাসোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিগত সময়ে নদী ভাঙনের শিকার হলে ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম পাড়ে স্থানান্তর করা হয়। স্থানান্তরিত স্থানে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার ভালো ঘর না থাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় উক্ত বিদ্যালয়ের গৃহ নির্মাণের জন্য (প্রাকল্লিত মূল্য) ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। যা পরবর্তীতে চুক্তিমূল্য ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা হিসেবে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের গৃহ নির্মাণের কাজ পায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মেসার্স রফিক ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইয়ানুর ট্রেডার্সের নিকট এ কাজ হস্তাস্তর করেন। ইয়ানুর ট্রেডার্স অধিক লাভের আশায় সংশ্লিষ্ট স্টীমেট (নকশা) অনুযায়ী কাজ না করে সিংহ ভাগ টাকা আত্মসাতের পায়তারা চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুটার তৈরী করলো যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

স্থানীয়রা জানায়, বিদ্যালয়ের মেঝে ঢালাই ও গৃহ নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ময়লাসহ নিম্নমানের বালু, ইট ও সিমেন্ট। গৃহ নির্মাণ কাজের সময় উপজেলা প্রকৌশলীর কোন প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজের সুযোগ পাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাসেল আহমেদ বলেন, গৃহ নির্মাণের কাজ অধিকাংশ সময়ে বিদ্যালয় বন্ধের দিন করা হয়ে থাকে। সময় সুযোগ না থাকায় কাজের তদারকি করা সম্ভব হয় না। এ কারণে কাজের মানের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের গৃহ নির্মাণের কাজ দেখতে গিয়ে অবাক হয়েছি। নিম্নমানের বালু ও অল্প পরিমাণে সিমেন্ট ব্যবহার করে গৃহ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় হওয়ায় তার দাপটে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। এভাবে কাজ করা হলে বিদ্যালয়ের গৃহটি বেশিদিন টেকসই হবে না।

উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়টির গৃহ নির্মাণ কাজের অনিয়মের বিষয়ে অনেক ব্যক্তি অভিযোগ করেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এভাবে নিম্নমানের কাজ করা হলে গৃহটি অল্প দিনেই ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পরবে।
আরও পড়ুন: নয়াপল্টনের ডিআর টাওয়ারে আগুন

তিনি বলেন, ঠিকাদারের সাথে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদা রোজীর যোগসাজস থাকতে পারে। কারণ উক্ত ঠিকাদারের অধিকাংশ কাজেই তিনি তদারকি করে থাকেন। এরআগেও বেশ কয়েকটি কাজ নিম্নমানের করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। তিনি নির্মাণাধীন গৃহটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকি করা উচিত বলে মনে করেন।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইয়ানুর ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী আকাশ বলেন, আমার কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতিতে নির্মাণ কাজ চলছে।

এ ব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইমতিয়াজ আহমেদ ইমু বলেন, চর কালাসোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গৃহ নির্মাণ কাজ যেভাবে চলছে চলুক। নির্মাণ শেষে তদন্ত করে কাজের মান নিম্ন হলে ঠিক করে নেয়া হবে।

দেশদর্পণ/এসকেবি/এসজে