করোনা ভাইরাসে মারা যাবে ৪ কোটি মানুষ!

করোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এতে বিশ্বে মারা যেতে পারেন সাড়ে ৪ কোটি মানুষ। আক্রান্ত হতে পারেন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগ। এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক মেডিসিনের চেয়ারম্যান প্রফেসর গাব্রিয়েল লিউং। অন্যদিকে গতকাল বুধবার থেকে চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যে সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই এবং বাংলাদেশের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পেও এই ভাইরাসের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক মেডিসিনের চেয়ারম্যান প্রফেসর গাব্রিয়েল লিউং বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকারকে অবশ্যই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তার সতর্কবার্তায় আরো বলা হয়েছে, যদি শতকরা এক ভাগ মানুষও মারা যায় তাহলেও মারা পড়বেন কয়েক কোটি মানুষ। বর্তমানে বিশ্বে মোট জনসংখ্যা ৭০০ কোটিরও বেশি। এর অর্থ হলো বর্তমান হারে যদি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এতে আক্রান্ত হবেন কমপক্ষে ৪০০ কোটি মানুষ। প্রফেসর লিউংয়ের মতে, যদি শতকরা এক ভাগ মানুষও মারা যায়, তাহলে এতে মারা যাবেন কমপক্ষে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ।

ওদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানরা গত মঙ্গলবার ভাইরাস-বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন, যেসব সংখ্যার কোনো ভিত্তি নেই, তেমন তথ্য ছড়িয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংক্রমণ আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে আক্রান্তদের অনেক সময় নিয়ে নজরেই রাখা হচ্ছে না। এর কারণ, আক্রান্তদের অনেকের মধ্যে লক্ষণগুলো খুব সামান্যই দেখা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৩ হাজার মানুষ। মারা গেছেন ১ হাজার ১১৩ জন।

এদিকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১৩ জনে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৪৪ হাজার ৬৫৩ জন। তবে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এর অর্থ এই নয়, এই ভাইরাস সংক্রমণ থেমে গেছে। যেকোনো সময় তা আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে।

গতকাল বুধবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, মঙ্গলবার একদিনে এ ভাইরাসে মারা গেছেন ৯৭ জন; তাদের মধ্যে ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে হুবেই প্রদেশে। এ দিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৫ জন। দেশটির মূল ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে একজন জাপানি ও একজন মার্কিন নাগরিক রয়েছেন, বাকিরা সবাই চীনা নাগরিক।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। একপর্যায়ে এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮টি দেশে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। চীনের বাইরে হংকং ও ফিলিপাইনে এতে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ফিলিপাইনের ওই ব্যক্তিও চীনা নাগরিক।

প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়। ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না যায়, সেজন্য হুবেই প্রদেশকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে চীন। ওই অঞ্চলের সঙ্গে চীনসহ বাইরের দুনিয়ার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

রোগের নাম ‘কভিড-১৯’ : চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনা ভাইরাসটি যে সংক্রামক রোগের কারণ ঘটাচ্ছে, তার আনুষ্ঠানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘কভিড-১৯’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস গত মঙ্গলবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন থেকে এ রোগ ঈড়ারফ-১৯ নামেই পরিচিত হবে। এই নামের মধ্যে ঈঙ দিয়ে করোনা, ঠও দিয়ে ভাইরাস, উ দিয়ে ডিজিজ (রোগ) বোঝানো হচ্ছে। আর ১৯ থাকছে ভাইরাস ছড়ানোর সময় হিসেবে ২০১৯ সালকে চিহ্নিত করার জন্য। এ ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গগুলো নিউমোনিয়ার মতো বলে এর চীনা নাম দেয়া হয় নভেল করোনা ভাইরাস নিউমোনিয়া, সংক্ষেপে- এনসিপি।