দৌলতপুরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পুলকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। পাহাড়সম অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে।

অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, এলজিইডির দৌলতপুর উপজেলা অফিসে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলক এ উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের চরদিয়ার গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থেকে সেই প্রভাব খাটিয়ে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলীর দফতরে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘ এই মেয়াদের মধ্যে ক্ষমতার দাপটে সরকারের অবকাঠামো উন্নয়নের নাম করে বিভিন্ন এলাকার লোকজনের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের শর্তে রাস্তা, কালভার্ট, সামাজিক উন্নয়নের মসজিদ, ঈদগাহ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের তালিকাভুক্ত করেন।

তিনি উপজেলা প্রকৌশলীর ওপর প্রভাব বিস্তার করে এই দফতরে অন্য দুজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কর্মরত থাকার পরেও অধিকাংশ কাজের ওয়ার্কঅর্ডার নিজের নামে করে নিয়ে ঠিকাদারদের নিম্নমানের কাজ দেয়ার চুক্তিতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

মেইনটেনেন্সের প্রকল্পের আওতায় রাস্তাগুলোর ক্ষেত্রে পিকেনআপ চটানো পুরনো পাথর ঠিকাদারদের ব্যবহারের শর্তে ওই পাথরের বাজার মূল্য ৬০% টাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলক গ্রহণ করে থাকেন। নতুন রাস্তা পাকা করনের ক্ষেত্রে তিনি নিজের এস্টিমেট করার সময় যেসব রাস্তায় এইসবিবি রয়েছে সেই সব রাস্তার এইসবিবি কম ধরে প্রভাব খাটিয়ে ওই কাজের ওয়ার্কঅর্ডার নিজের নামে করে নিয়ে বিভাগীয় মালামালের টাকা ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিজে গ্রহণ করেন।

নতুন রাস্তার কাজের এএস ৫০/৫০ বালু ও খোয়া থাকার কথা থাকলেও আশরাফুল ইসলাম পুলক ঠিকাদারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তার পছন্দের ওয়ার্ক অ্যাসিসটেন্ট লোকমান হোসেন এবং মোশারফ হোসেনকে প্রতিদিন ঠিকাদারদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করার শর্তে এবং নিজে মোটা অংকের টাকা গ্রহণের শর্তে এএস বালু ও খোয়া মিক্সার করে নিম্নমানের রাস্তা তৈরি করিয়ে আসছেন। যা অল্পদিনের ব্যবধানে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের টেকসই উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। আশরাফুল ইসলাম পুলক অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির একজন প্রকৌশলী। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয় পরিচয় এবং অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তিনি একের পর এক বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের পাহাড় গড়েছেন।

যেসব ঠিকাদার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলকের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করেন তাদেরকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে। যে ঠিকাদার প্রকৌশলী পুলককে নগদ অর্থ প্রদানে রাজি হন না সেই ঠিকাদারকে ব্যাংকের চেক প্রদান করে উন্নয়ন কাজের লেআউট নিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করতে হয়। ঠিকাদারের চেকে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের প্রমাণও রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এই উপ-সহকারী প্রকৌশলীর এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে জনরোষ।

এদিকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলক উপজেলা প্রকৌশলীর ওপর প্রভাব খাটিয়ে তার নিজের বড় ভাইয়ের ছেলে আবু সাঈদকে লেন্থম্যান এবং সুপারভাইজার হিসেবে এই দফতরে নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তামানে তিনি সেখানেই কর্মরত রয়েছেন। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে দৌলতপুর উপজেলায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলক। অদৃশ্য শক্তির বলে তার দাপটের কারণে উপজেলা প্রকৌশলীর দফতরে বদলি হয়ে আসা ভালো মনের কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে চলে যান।

আশরাফুল ইসলাম পুলকের বিরুদ্ধে এসব পাহাড়সম অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে এ উপজেলায় উন্নয়ন কাজের মান বজায় রাখা সম্ভব হবে না, বরং ব্যাহত হবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলক নিজের উপজেলায় বছরের পর বছর কর্মরত থেকে বহাল তবিয়তে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়ে আসলেও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন?।

অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলকের কাছে তার বিরুদ্ধের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। সঠিকভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে আমাকে একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরাগভাজন হতে হচ্ছে। পুলক বলেন, আমি আমার জায়গায় ঠিক আছি। লেখালেখি করে সামাজিকভাবে হেয় করা ছাড়া আমার কোনো কিছুই হবে না।

প্রসঙ্গত, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম পুলকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশ হলেও এখনো এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।