প্রকৃত বঙ্গবন্ধু প্রেমীদের খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি

প্রকৃত বঙ্গবন্ধু প্রেমীদের খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন সাবেক ছাত্রনেতা ও মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন,প্রায় এক মাস যাবৎ ঢাকা শহরে নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে প্রায় ৩ কোটি মানুষ ও ৬৫ লক্ষ ভোটারের শহরে  নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা হয়েছে দুই একটা ঘটনা ছাড়া উৎসব মুখর পরিবেশে।

আরও পড়ুন:
২৫ পর চট্টগ্রামের দুই থানার ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা
বেনাপোলে পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত 

বি,এন,পি, এক মাস মাঠে থেকে বিনা বাঁধায় যেভাবে উৎসব মুখর পরিবেশে প্রচার প্রচারনা করেছে, এর থেকে সুষ্ঠ,  শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার দাবি তারা করতে পারেন না। তবে আমাদের মনে থাকা উচিত ১৩ সালে ৫ টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ও হেরে গিয়েছিল। ১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বি,এন,পি অংশ গ্রহণ করলে নির্বাচনী ফলাফল কি হত সেদিকে নাই বা গেলাম। তার দুই মাস পরে উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ বি,এন,পি কিন্তু ৫০%-৫০% নির্বাচিত হয়েছিল।

৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘ ১৬ বৎসর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম, জেল জুলুম, হুলিয়া হাজার হাজার নেতা কর্মীর অাত্বত্যাগের বিনিময়ে সরকার গঠন করতে শতভাগ আশাবাদী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। বাস্তবতাও ছিল আওয়ামী লীগের পক্ষে দীর্ঘ নয় বৎসর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৫ দলীয় জোট অন্যদিকে বি,এন,পি সাত দলীয় ঐক্য জোট, আন্দোলন সংগ্রামে সব সময় আওয়ামী লীগ এগিয়েছিল। ৯১ সালে নির্বাচনী মাঠে অতি আশাবাদী, অতি উৎসাহী হয়ে বাড়ি বাড়ি ভোট চাইতে না যেয়ে শুধু মোড়ে মোড়ে নির্বাচনী ক্যাম্প করে ক্যাম্পে বসে মাইক বাঁজানো ছাড়া কোনো কাজ ছিল না। যার পরিনাম ভোটের পরিমান বেশী পেয়েও আসন সংখ্যা কম হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারে নাই।

১ লা ফেব্রুয়ারী ঢাকা সিটি নির্বাচনে বি,এন,পি যদি পরাজয়ের আগে পরাজিত না হয়ে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ না চাঁপিয়ে জেতার শতভাগ মানসিকতা নিয়ে ভোটার সংগ্রহ করে মাটি কামড়িয়ে পড়ে থাকতো তাহলে ফলাফল ভিন্ন হলেও হতে পারতো।

ঢাকা দুটি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা শতভাগ জয় নিশ্চিত মনে করে পোষ্টার, প্রচারপত্র, ফেসবুক, মিছিল এবং মাইক ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থেকেছে। লেমেনেটিং পোষ্টার লাগিয়ে পরিবেশ নষ্ট করেছে। বহু ভোটার ভোটার স্লিপ পর্যন্ত পাননি। মেয়র প্রার্থীর পক্ষে আলাদা প্রচার টিম ছিল, প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল তার পরেও বেশি সংখ্যক ভোটার ভোটার স্লিপ পাননি।

সন্মানিত ভোটারদের মধ্যে ভোট না দেওয়ার যে মানষিকতা তৈরী হয়েছে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসার দ্বায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদেরকেই নিতে হবে। এখান থেকে বের করে আনতে না পারলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মানুষ রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়বে, জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আগামী  ৪০/৫০, বৎসর বেঁচে থাকবেন না দলের নেতা কর্মীদেরকেই দলের ভোটার ও সমর্থকে ধরে রাখতে হবে ও সংখ্যায় বৃদ্ধি করতে হবে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তার কর্মী  সমর্থকেরা ৭৫ পরবর্তী নেতা কর্মী ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রান নেতা কর্মীদের কতটুকু খোঁজ খবর নিয়েছেন?

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত  বি,এন,পির নেতা কর্মীদের দ্বারা নির্যাতিত নিষ্পেষিত বাড়ি-ঘর হারা সহায় সম্বলহীন নেতা কর্মীরা ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কতটুকু মূল্যায়িত হয়েছে?

ওই সময়ের জামায়াত বি,এন,পির নেতা কর্মীরা ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ও হাইব্রিড আওয়ামী লীগরাই তো ক্ষমতায়। ওর্য়াড,ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা,পৌরসভা সহ বিভিন্ন সহযোগী  সংগঠনের কেন্দ্র পর্যন্ত দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা কর্মীরা প্রতেকেই নিজের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষে প্রকৃত বঙ্গবন্ধু প্রেমী ও শেখ হাসিনার অনুসারীদের অ-পছন্দ করেন এবং দূরে রাখার চেষ্টা করেন। প্রকৃত বঙ্গবন্ধু প্রেমী আওয়ামী লীগ কর্মীরা কখনো কোথায় ও মাথা নত করেন না। চাল গম ও চাকুরির জন্য ধরনা দেন না।

কাদের ভাই প্রায়ই বলেন, প্রকৃত আওয়ামী লীগ কর্মীদেরকে খুঁজে বের করে দ্বায়িত্ব দিতে হবে মূল্যায়ন করতে হবে, বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছাত্র লীগের যে সমস্ত নেতা কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রলীগের দ্বায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধের মিছিল,প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের খুঁজে বের করা খুব একটা কঠিন কাজ না। প্রতিটি উপজেলা, ও কলেজ কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে খুঁজে বের করতে পারলে অন্যদেরকেও খুঁজে বের করা খুবই সহজ হবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক গোয়েন্দা সেল আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনারও অনেক গোয়েন্দা সেল আছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অাদর্শ বাস্তবায়ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরনে প্রকৃত বঙ্গবন্ধু প্রেমী ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রান নেতা কর্মীদের খুঁজে বের করে যথাযথ দায়িত্ব প্রদান ও সঠিক মূল্যায়ন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে।

জামায়াত বি,এন,পি থেকে আগত নেতকর্মী ও হাইব্রিড আওয়ামী লীগ দিয়ে ২০ – ২২% ভোটের বেশী সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে যে পরিমান ভোট পড়েছিল এবং আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল সেই জায়গায় ফিরে যেতে হলে সময় এসেছে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা নাহলে ভবিষ্যত খুব খারাপের দিকেই যাবে। এবং পরবর্তী প্রজন্মকে এর খেসারত দিতে হবে।

‘৭৫ থেকে ‘৯০ পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যারা ছাত্রলীগ করেছে নেত্রী যদি তাদেরকে ডেকে এক বেলা সময় দিয়ে কিছু দায়িত্ব দেন তাহলে তারা সংগঠিত হয়ে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।

ফেব্রুয়ারী ০৭, ২০২০ at ২১:১২:৫৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এমএস/এআর