চৌগাছায় এইচএসসি’র কেন্দ্র নিয়ে জটিলতা, অভিভাবক মহলে ক্ষোভ

যশোরের চৌগাছায় এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই কেন্দ্র নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সরকারী কলেজ পূর্বের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেছেন। একই ভাবে আবেদন করেছেন মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ। পৌর সদরের প্রধান দুই কেন্দ্রের আবেদনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা, অভিভাবক মহলেও দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। সূত্র জানায়, উপজেলার মোট ১০ টি কলেজ ৪টি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে আসছেন। কেন্দ্র গুলো হচ্ছে চৌগাছা সরকারী কলেজ, মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ, এসএম হাবিব পৌর কলেজ ও এবিসিডি কলেজ। বিগত বছর গুলোতে এইচএসসি পরীক্ষায় এসএম হাবিব পৌর কলেজ ও এবিসিডি কলেজ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত ভাল ফলাফল অর্জন করে আসছে। সে তুলনায় সরকারী কলেজ ও মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা ভাল ফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

চৌগাছা সরকারী কলেজ কেন্দ্রে মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ ও তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়। অপরদিকে মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে সরকারী কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়। স্বস্ব কেন্দ্রের শিক্ষকরা কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। পরীক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নিকট থেকে কোন ছাড় পাইনা। সে কারনে সরকারী কলেজ এ বছর চক্র আকারে পরীক্ষা কেন্দ্র সাজিয়ে নেয়ার জন্য যশোর শিক্ষাবোর্ড বরাবর একটি লিখিত দিয়েছেন। অপরদিকে প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা এলে এসএম হাবিব পৌর কলেজ ও এবিসিডি কলেজ কেন্দ্রে নানা উপায়ে পরীক্ষার্থীদের সহযোগীতা করা হয়। এই দুই কেন্দ্রের কক্ষ পরীদর্শকরা পরীক্ষার্থীদের সহযোগীতা করেন। সে কারনে এই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা বরাবরই ভাল ফলাফল অর্জন করে আসছে এমনটি অভিযোগ করেন সরকারী ও মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ। এসএম হাবিব পৌর কলেজ কেন্দ্রে এবিসিডি কলেজ ও পাশাপোল আমজাততলা মডেল কলেজ পরীক্ষা দেয়। অপরদিকে এবিসিডি কলেজ কেন্দ্রে এসএম হাবিব, হাকিমপুর মহিলা কলেজ, জেএমএসকে কলেজ ও মাড়–য়া স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ দেয়। এই কেন্দ্র দুটি বিশেষ সুবিধা নেয় বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকগন জানান, বিগত বছর গুলোতে যে ভাবে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে সেই ধারা থেকে বের হওয়া জরুরী। একটি অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য চক্র আকারে কেন্দ্র গুলোকে সাজিয়ে দিলে কোন কেন্দ্রই অনৈতিক সুবিধা নিতে পারবে না।

এ বিষয়ে এসএম হাবিব পৌর কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বলেন, পূর্বে যে পন্থায় পরীক্ষা হয়ে এসেছে সেখানে কোন সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি না। তবে কারও কোন সমস্যা থাকলে সেটি বসে নিজেরাই সমাধান করা উচিত। এবিসিডি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম জানান, বছরের পর বছর সরকারী কলেজ আমার প্রতিষ্ঠানকে হেয় করতে নানা পরিকল্পনা করে আসছে। আমি কোন ক্রমেই সরকারী কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাবো না। প্রয়োজন হলে আমি পাশ্ববর্তী কোটচাঁদপুর যেয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসবো।এ বিষয়ে সরকারী কলেজর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম শিক্ষাবোর্ডে আবেদনের বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা মৃধাপাড়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে যাবো না এমনটি নই। বছরের পর বছর চৌগাছার দু’টি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভাল ফলাফল করছে। সেখানে আমরা ভাল শিক্ষার্থী নিয়েও সে ভাবে ফলাফল করতে পারছি না। সে কারনে আমি কেন্দ্র গুলোকে চক্র আকারে করার জন্যও শিক্ষাবোর্ডকে জানিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, কোন কলেজ কোথায় পরীক্ষা দিবে সেটা নির্ধারণ করবে শিক্ষাবোর্ড। সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা নেয়ার লক্ষে বোর্ড কর্তৃপক্ষ যদি আমার মতামত চাই সেক্ষেত্রে আমি মতামত দিবো বলে তিনি জানান। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড.এম মোস্তানিছুর রহমান বলেন, চৌগাছাতে অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষার জন্য কেন্দ্র গুলো যে প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নিচ্ছে তার পরিবর্তন জরুরী। চক্র আকারে কেন্দ্র করলে যারা প্রকৃত পক্ষে মেধাবী তাদের মূল্যয়ন হবে এবং চৌগাছাতে একটি সুষ্ঠু পরীক্ষা ব্যবস্থা ফিরে আসবে বলে আমি মনে করি।

দেশদর্পণ/এমআই/এসজে