আদর্শবান তরুণ সমাজ চাই

মানুষের গোটা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে তার তারুণ্যকাল। সুনির্দিষ্ট এই সময়েই মানুষের জীবনের মোড় ঘুরে। বলা যায়, জীবনের স্বর্ণালী সময় এই যৌবনকাল। এখন যারা তরুণ, তোমাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যত নিয়ে। হেলায়, খেলায় এই যৌবনকাল কেটে গেলে জীবনে সফলতা আসবে না। সামর্থ্য ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেখানে নোঙর ফেলতে হবে।অনেক তরুণ মনে করে, বোধ হয় এই সময়টাই আনন্দ ফূর্তি করার মোক্ষম সময়। আর মনে করাটাই স্বাভাবিক। তবে মনে রাখতে হবে, ভালো হতে চাইলেও যেমন একালে হওয়া যায়, খারাপ হওয়ারও উপযুক্ত সময় একাল! ফলে মন যা চায় তা করতে থাকলে শেষ জীবনে পস্তাতে হবে। কী করলাম, কী হারালাম তা নিয়ে মাথা চাপড়ালেও তখন আর কোন ফায়দা হবে না। অনেক তরুণ, যুবককে দেখা যায় নেশার ঘোরে মাতাল হয়ে রঙিন দুনিয়ার স্বপ্ন দেখতে। সততা সত্যবাদিতা আর চারিত্রিক সৌন্দর্যকে পায়ে ঠেলে জীবনের মানে খুঁজে ফেরে। সব ধরনের অশ্লীলতা ও অনৈতিকতাকে নিজের জন্য উপযোগী মনে করে। অথচ এসব কিছু যে জীবন ধ্বংসের উপাদান তা যৌবনের তাড়নায় বুঝে উঠতে পারে না যুবক বৈকি! বুঝলেও তখন আর সময় থাকে না।

হে তরুণ, তোমাকে অবশ্যই সব ধরনের অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে আসতেই হবে। নিজের মা-বাবা, দেশ ও মানুষের স্বপ্ন পূরণে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। কারণ,সবাই তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে। তোমরাই নেতৃত্ব দেবে জাতিকে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের জন্য যে স্ফুলিংগ দেখা গেছে তাতে তরুণ এবং যুবকদেরই অংশগ্রহণ ছিল সব থেকে বেশি। এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়িয়েছে।

তরুণদের হতে হবে সাহসী। ধর্মীয় অনুশাসনের অনুসরণ, সৎ ও যোগ্য করে নিজেকে তৈরী করার মানসিকতা। সর্বোপরী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব প্রিয়নবী (সাঃ) এর আদর্শে জীবন গঠনের সংকল্প। সব ধরনের অন্যায়,অত্যাচার আর অবিচারের বিরুদ্ধে তোমাদেরকেই সিংহের মতো গর্জে উঠতে হবে। কোন ধরনের মাদকতা স্পর্শ করতে পারবে না তোমাকে। মাদকের বিরুদ্ধেই তোমার অবস্থান হতে হবে আপোষহীন। সময়ের সাহসী পুরুষ হিসেবে তোমাকে দেশ ও জাতির আলোকবর্তিকা হয়েই উদ্ভাসিত হতে হবে।অসহায় জনগণ তোমার দিকেই তাকিয়ে।তাদের বাঁচাতে ও স্বপ্ন পূরণে তোমাকেই নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হতে হবে।নেশার ঘোরে জীবনের মানে নেই। চরিত্র গঠন ও মানুষের কল্যাণের মাঝেই জীবনের অর্থ খোঁজো। বদলে যাবে জীবন, বদলে যাবে মন ও মনন। এতেই সুখ, এতেই শান্তি। সত্যকে আঁকড়ে ধরো, মিথ্যাকে বর্জন করো। আধুনিকতার নামে যাবতীয় বেলাল্লাপনাকে ছুঁড়ে ফেলো। পায়ে পিষো সব নষ্টামি আর অপসংস্কৃতিকে। এড়িয়ে চলো মন্দ লোকের সংস্পর্শ। যে আদর্শ তোমাকে বিপথগামী করবে, পথহারা করবে।সে আদর্শ পরিত্যাগ করো। ভালোবাসো নিজেকে, নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশকে। তবেই সার্থক হবে জীবন-যৌবন। তবেই দিশাহীন মানুষ দিশা পাবে। তোমরা যারা তরুণ, যুবক-তোমাদের কাছেই এ প্রত্যাশা সবার।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক