দর্শনা চিনিকলে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা

দর্শনা কেরুজ চিনিকলে মানসম্মত চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে চলতি মাড়াই মৌসুম শুরু করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। চিনি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল আখের কারণে চিনির বদলে তৈরি হচ্ছে প্রায় পাউডার। সেই সাথে চিনি আহরণের হার চলতি মৌসুমে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। যা বিগত ৮১ বছরের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে মনে করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।

কোনভাবেই চিনি আহরণের হার ঊর্ধ্বমুখী করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। কি কারণে চিনি আহরণের হার নিম্নমুখী হচ্ছে, তারও কোন কারণ খুজে পাচ্ছে না তারা। ফলে চিনি উৎপাদনে বিগত দিনের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে লোকসানের বোঝা ভারী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুধু চিনি আহরণই কম হচ্ছে না, এতোটাই চিকন দানার লালচে চিনি তৈরি হচ্ছে দেখে – মনে হচ্ছে প্রায় পাউডার। ফলে চিনির গুণগত মান নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। গুদামজাত করার পর কতোদিন এই চিনি অক্ষত থাকবে, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে অনেকের। চলতি মৌসুমের মত আগামী মৌসুম শুরুর আগেই লাভ লোকসানের হিসাব নিকাশ না করে গোডাউন খালি করতে বিক্রি করে দিতে হবে এই চিনি।

মানহীন আখ উৎপাদন এবং আবর্জনাযুক্ত আখ মাড়াই করার ফলে এমনটি হচ্ছে বলে দাবি করেন শ্রমিক-কর্মচারী এবং আখ চাষীরা। রাষ্টায়ত্ত চিনিকলটি বাঁচাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর দর্শনা কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৯-২০ মাড়াই মৌসুম শুরু করে। শুরুর আগেই গোডাউনে থাকা চিনি বাজার দর ছাড়া কেজি প্রতি ৩ টাকা কমে বিক্রি করে দেয়া হয়। এতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার উৎপাদিত চিনি থেকে লোকসান গুণতে হয়। বিগত দিনে জোড়াতালি দিয়ে নিম্নমানের চিনি উৎপাদন করায় তা গলে পচে নষ্ট হচ্ছিলো বলে জানিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। তাই চলতি মৌসুমে ভালো মানের চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মিল চালুর ২৪ দিন পরও দেখা যাচ্ছে, চিনি আহরণের হার সর্বকালের নিম্নস্তরে ঠেকেছে।

এ পর্যন্ত চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ মাড়াই করেছে ২৭ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন। তা থেকে চিনি উৎপাদন হয়েছে ২২ হাজার ১৭০ বস্তা (৫০ কেজি)। সরবরাহকৃত আখের চেয়ে চিনি উৎপাদন কম হয়েছে ২৭২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৫ হাজার ৪৫০ বস্তা। শুরু থেকেই চিনি আহরণের হার রয়েছে ৫ শতাংশেরও নিচে। যার কারণে কোন হিসাবই মিলাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

অথচ একই সময়ে ঝিলবাংলা চিনিকলে চিনি আহরণের হার ৬.৫৯ শতাংশ, নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে ৬.৪৫ শতাংশ, ফরিদপুর চিনিকলে ৫.৫০ শতাংশ। মৌসুম শেষে হিসাব নিকাশ মিলাতে গেলে বোঝা যাবে, চিনি উৎপাদনে লোকসান হয়েছে কতো কোটি টাকা। গত বছরে চিনি উৎপাদনে চিনিকলের লোকসান হয়েছিলো প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। চলতি মৌসুমে এই লোকসান ১০০ কোটি টাকা হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন শ্রমিক ও কর্মচারী বলেন, এই চিনিকলে লোকসানের কারণ শুধু রিকভারী নয়। ক্রয়-বিক্রয়ে দূর্নীতি, প্রকল্পের কাজে দূর্নীতি, সমন্বয়হীনতার অভাব ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনা। দর্শনা আখ চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, মৌসুম শুরুর দু’দিন আগে চিনিকল প্রশাসন, সিবিএ নেতা, আখ চাষী এবং আখ চাষী কল্যাণ সমিতির নেতারা বসেছিলেন। সেখানে আলোচনা হয়, কোনভাবেই মাটি এবং আবর্জনাযুক্ত আখ সরবরাহ করা যাবে না। এ বিষয়ে চিনি উৎপাদন বিভাগের উৎপাদন ম্যানেজার জিল্লুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী জানান, চিনি আহরণের হার বৃদ্ধির জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে যে আখ চিনিকলে আসছে, তাতে চিনির পরিমাণ কম। তাই আখ এবং চিনির হিসাব মিলছে না। বিষয়টির প্রতি সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। আশা করছি, চিনি আহরণের হার বৃদ্ধি পাবে।