বীরমুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির মানবেতর জীবনযাপন

মাতৃভূমিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে যে চোখ একদিন শত্রুর অস্তিত্ব আর আস্তানা খুঁজে নিখুঁত নিশানায় বন্ধুক চালাতে সাহায্য করতো সেই চোখ আজ অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় দৃষ্টি শক্তিহীন। দৃষ্টি শক্তি হারানো মানবেতর জীবন যাপন করা মানুষটি ভূরুঙ্গামারীর বীরমুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি (৭০)। তাঁর স্ত্রীর এক চোখও দৃষ্টি শক্তিহীন হয়ে গেছে চিকিৎসা করতে না পারায়। অন্য চোখটিও দৃষ্টি শক্তিহীন হওয়ার উপক্রম।

খোজ নিয়ে জানা যায়, অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটে মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির পরিবারের। শুধুমাত্র সম্মানী ভাতায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পরেছে তাঁর পক্ষে। ঔষধ কেনার টাকা জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। তাই আর্থিক সাহায্য চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার।

মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির বাড়ী কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চর-ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নতুন হাট এলাকার বাসিন্দা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৬নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন। তার নাম মুক্তি বই, লাল মুক্তিবার্তা ও জাতীয় তালিকা রয়েছে। তিনি চর-ভূরুঙ্গামারীর নতুনহাট বাজার জামে মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করতেন এবং এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়াতেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং খতিবের দায়িত্ব পালন ও প্রাইভেট পড়িয়ে যে সামান্য আয় হতো তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালাতেন। সংসার চললেও স্ত্রী ও তার নিজের উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। এতে তাদের শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির দু’চোখই এখন দৃষ্টি শক্তিহীন। হুইল চেয়ার ছাড়া তিনি চলাফেরা করতে পারেন না।

দুই ছেলে ও দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির পরিবার। বড় ছেলে আব্দুল হালিম (৩৫) মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভারি কাজ করা সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। ছোট ছেলে আব্দুল হান্নান (৩০) ঢাকায় রিকশা চালায়। ওসমান গনির মেয়ে রাশেদা (২২) স্বামী পরিত্যাক্তা হয়ে এক সন্তান সহ বাবার বাড়িতেই থাকে। তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম (৬০) এক চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন অন্য চোখটিও দৃষ্টি শক্তিহীন হওয়ার পথে।

মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি দুঃখ করে বলেন, ‘বিজয়ের মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের আকাশে লাল সবুজের উড়ন্ত পতাকা দু-চোখ ভরে দেখতে না পাওয়াটা যে কতটা কষ্টের তা বলে বোঝাতে পারবো না। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন তিনি যেন আমার ও আমার পরিবারের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেন।’

চর-ভূরুঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম ফজলুল হক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির চিকিৎসার জন্য বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।’

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘ওসমান গনির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছি। তার বিষয়টি সহানুভূতির সহিত বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

২১ডিসেম্বর, ২০১৯ at ১৬:৪৭:৪০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এজি/প্রদা