কুষ্টিয়া শহরে জন্মদিনের উৎসব পালন উপলক্ষে বিষাক্ত মদ (এ্যালকোহল) পান করে বিকেএসপির এক খেলোয়াড়সহ চার বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন, জিহাদুর রহমান সাজিদ, ফাহিম, পাভেল ও সুরুজ। এদের মধ্যে জিহাদুর রহমান সাজিদ বিকেএসপির বাস্কেট বল খেলোয়াড়। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো দুজন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘রাফি হোমিও হল’ নামে একটি হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকান সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে বিকেএসপির খেলোয়াড় জিহাদুর রহমান সাজিদের জন্মদিনের পার্টি চলাকালে বন্ধুরা মিলে বিষাক্ত মদ (এ্যালকোহল) পান করেন। এর কিছুক্ষণ পর সাজিদসহ অন্তত ৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে তাৎক্ষণিক কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মারা যান জিহাদুর রহমান সাজিদ। সন্ধ্যায় মারা যান ফাহিম। এরপরে পাভেলের মৃত্যু হয়। রাতে রাজশাহী নেয়ার পথে মারা যান তাদের আরেক বন্ধু সুরুজ।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) বাস্কেট বল টিমের খেলোয়াড় জিহাদুর রহমান সাজিদের জন্মদিন ছিল বৃহস্পতিবার। জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে তার বন্ধু ও পরিচিতরা শহরের কোর্ট স্টেশনের সামনে অবস্থিত ‘রাফি হোমিও হল’ থেকে বিষাক্ত এলকোহল কেনেন।
পরে ইসলামিয়া কলেজের মাঠে গিয়ে তারা সেই মদ (এ্যালকোহল) পান করেন। এরপর বিকেলের দিকে তারা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়লে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজিদ, ফাহিম, পাভেল ও সুরুজ পর্যায়ক্রমে মারা যান। এ ছাড়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আতিকুল (২২) ও শান্ত (২৩) নামে আরো দুই বন্ধু। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
নিহত বাস্কেট বল খেলোয়াড় জিহাদুর রহমান সাজিদ (২০) কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়া এলাকার মফিজুল ইসলামের ছেলে, তার অপর দুই বন্ধু ফাহিম হোসেন (২১) থানাপাড়া এলাকার সাগরের ছেলে, পাভেল ইসলাম (২৩) একই এলাকার আরমান হোসেনের ছেলে এবং সুরুজ (২২) শরিফ উদ্দিনের ছেলে। এদের মধ্যে শহরের থানাপাড়া এলাকার শরিফ উদ্দিনের ছেলে সুরুজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে জন্মদিনের উৎসব পালন করতে গিয়ে বিষাক্ত মদ পানে বিকেএসপির খেলোয়াড় জিহাদুর রহমান সাজিদসহ তিন যুবকের মৃত্যুতে নিহতদের স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তাপস কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, এ্যালকোহলজাতীয় পানীয় এনার্জি ড্রিংকসের সাথে মিশিয়ে পান করার পর অসুস্থ হয়ে ৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়। রাজশাহী নেয়ার পথে আরেকজন মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অপর দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে তিনি জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, ‘শহরের রাফি হোমিও হল থেকে বন্ধুরা মিলে এ্যালকোহল কেনেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই হোমিও দোকানের মালিক রফিকুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। একই সাথে দোকানটি সিলগালা করে দেয়া হয়। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।