অটোরিকশা চালিয়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা

সুনামগঞ্জে সকল প্রতিকুলতা পায়ে ঠেলে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরুর ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালানো নারী যাত্রী রাণী দত্ত। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার খলাহাটি গ্রামের বাসীন্দা।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে জেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত জয়িতাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পান তিনি।

শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পাবার পর যাত্রী রাণী দত্ত বলেন, আজকে যে সম্মাননা আমাকে দেয়া হয়েছে আমি তা কোনোদিন ভুলবো না। এ সম্মাননা সকল নারীর সাহস জোগাবে। একজন নারী যে পুরুষ থেকে পিছিয়ে থাকতে পারে না এবং নারীও যে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে পারে এটাই বড় উদাহারণ। ছোট বেলা থেকে কিছু একটা করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অভাবের সংসারে তা যেনো হয়ে উঠছিল না। কিন্তু এখন স্বাবলম্বী নারী হয়ে কাজ করতে চাই। অটোরিকশা চালিয়েই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। যখন আমি প্রথম অটোরিকশা হাতে নেই, অনেক ভয় হয়েছিল। কিন্তু হেরে যাইনি। প্রথমে দুই একদিন হাত কাঁপলেও এখন আর হাত কাঁপে না।

আরও পড়ুন:
বাদলের বৈঠা এবার মোছলেমের হাতে
পূর্ণ মীরজাফর অপূর্ণ স্বামী!!

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু তারেক, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন প্রমুখ। জয়িতা অন্বেষণে আলোচনা সভা শেষে সুনামগঞ্জ জেলার ৫জন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা। শ্রেষ্ঠ ৫জয়িতা হলেন, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু ক্যাটাগরিতে যাত্রী রাণী দত্ত, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে নাসরিন আক্তার খানম, সফল জননী ক্যাটাগরিতে লক্ষী রাণী ও ফরিদা বেগম।


অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালানো নারী যাত্রী রাণী দত্ত সম্পকে জানা যায়, যাত্রী রানী ভালোবেসে বিয়ে করেন হৃদয় দত্তকে। কিন্তু স্বামীর ঘরেও সুখ হয়নি তার। বিয়ের এক মাস কাটতে না কাটতে স্বামী হৃদয় দত্ত তাকে রোজ নানান কারনে মারধর করতেন। প্রতিবাদ করলেই তাকে নির্যাতন করেছেন আরো বেশী। যখন বড় ছেলের জন্ম হয়েছে তখন পাশে পাননি স্বামীকে। একাই হাসপাতালে গেছেন সেখানে বাচ্চা প্রসবের পর একাই বাসায় এসেছেন। এখন তিন সন্তানের মা যাত্রী রাণী দত্ত। তার এক ছেলে দুই মেয়ে। সংসারের সব খরচ তার স্বামীই চালাতেন। তবে তিনি নিয়মিত কাজ করেন না। পরে যাত্রী রাণী সিদ্ধান্ত নেন কিছু একটা করবেন।

এরপর তিনি স্বামীর কাছ থেকে অটোরিকশা চালানো শিখেন এবং গত ৭ মার্চে তিনি অটোরিকশা নিয়ে প্রথমবার শহরে বের হন এবং এখন পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে জীবন-যাপন করছেন। এর পথে শহর জুড়ে প্রশংসার পঞ্চমুখ হয়ে সবার মুখে মুখে রটে যার তার নাম। এখন তিনি একজন সংগ্রামী আর সফল নারী হিসাবে সবার কাছে মাথা উচুঁ করে দাড়িয়েছন।

ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ at ১০:১৮:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/জেএ/এআই