৩ মাসে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বেড়েছে খেলাপি ঋণ

মাত্র তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। বর্তমানে মোট খেলাপি ঋণ এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা এ যাবতকালের রেকর্ড। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশই খেলাপি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিক অর্থাৎ জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অনেক গ্রাহক গত বছরের ডিসেম্বরে ঋণ পুনঃতফসিল করেছিলেন। কিন্তু পরে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। নতুন করে তারা খেলাপি হয়ে পড়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিতে এসে অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ খুঁজতে গত জুনে মাঠ পর্যায়ে ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গঠন করা হয়েছিল উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। কারণ খুঁজতে ৬ ব্যাংককে চিঠিও দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি ঋণখেলাপির সংখ্যাও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২ শতাংশ সুবিধা দিয়ে ঋণ পুনতফসিলের যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, তা এখনো কার্যকর হয়নি। এর প্রভাব আগামী ডিসেম্বরে পাওয়া যাবে। সে সময় খেলাপি অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। তবে ব্যাংকাররা বলেন, সাধারণত বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ মার্চ ও জুনে খেলাপি ঋণ কিছুটা বাড়ে।

আরো পড়ুন:
বেনাপোলে ইউএস ডলারসহ হুন্ডি পাচারকারী আটক
ইবি’র অধীনে অনুষ্ঠিত ফাযিল স্নাতক পরীক্ষার ফল প্রকাশ

এবার বাড়ল তৃতীয় প্রান্তিকেও। এর কারণ ডিসেম্বরে বছর শেষের হিসাব হয় বিধায় ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিল বাড়িয়ে দেয়। ঋণ আদায়েও বাড়তি চেষ্টা থাকে। এর বাইরে অন্য কারণও রয়েছে। যেমন- এ বছর ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ কারণে মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে। যদিও যেসব সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে তা এখনও কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তিন মাসের ব্যবধানে বেসরকারি ৪০ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বেড়েছে।

সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ৫৪ হাজার ৫৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৪৩ শতাংশ। গত জুন শেষে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা, যা ওই সময়ে তাদের বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে এসব ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সে হিসেবে গত মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ১ শতাংশ। গত জুন শেষে এসব ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ৬২ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের (কৃষি ও রাকাব) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৭০০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, গত জুন শেষে যা ছিল ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ব্যাংক দুটির বিতরণ করা ঋণের ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ খেলাপি।

নভেম্বর ২৭, ২০১৯ at ১৯:৩৩:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/এএএম