শীতের আগমনে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীতে ব্যস্ত গাছিরা

শীতের আগমনে নাটোরের লালপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রতিটি এলাকা জুড়ে এখন ঐতিহ্যবাহী মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীতে ব্যস্ত গাছিরা। অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুর গাছের কদর এখন অনেক বেশি।

প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার ধারে ও মাঠের খেজুর গাছ গুলি থেকে রস সংগ্রহরে জন্য হাড়ি পাতছেন গাছিরা আর শীত উপেক্ষা করে প্রতিদিন ভোর থেকে মধুবৃক্ষ খেজুরের গাছে গাছে উঠে রস সংগ্রহ করেন গাছিরা।বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরী করছেন সুস্বাদু খেজুরের পাটালি ও ঝোলা গুড়।খেজুরের পাটালি গুড় গাছিরা স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করেন। সব মিলিয়ে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীতে এখন দারুন ব্যস্ত সময় পার করছেন এই এলাকার গাছিরা।

সরেজমিনে উপজেলার লালপুর-বনপাড়া সড়কের ভুঁইয়াপাড়া ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা, যায় সুলতান আলী নামের মাঝ বয়সী এক ব্যাক্তি একটি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে হাড়ি পাতছেন। শতব্যস্ত দেখেও কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, শীত শুরুর আগেই আমরা নিজের ও বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে এক বছরের জন্য টাকার বিনিময়ে খেজুরের গাছ নিয়ে সেই গাছ থেকে রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝোড়ার কাজ শেষ করেছি। শীতকাল শুরু হওয়ায় আমরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীর কাজ শুরু করেছি। এবছর শীত একটু দেরিতে শুরু হওয়ায় আমরা একটু দেরি করেই রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেছি।

ঐ এলাকার আলতাব নামের এক গাছি বলেন, আমরা শীত মৌসুমে খেজুরের গাছের রস থেকে গুড় তৈরী করি আর সেই গুড় বাজারে বিক্রয়ের টাকা দিয়েই কোনমতে আমাদের সংসার চলে।

আরও পড়ুন:
মোবাইল আসক্তি থেকে বাঁচতে যা করবেন
এক নববধূকে নিয়ে দুই যুবকের মারামারি!

স্থানীয়রা বলছেন, খেজুরের গুড় এই এলাকার একটি ঐতিহ্য। খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরী একটি শিল্প এই শিল্পের সঙ্গে লালপুর উপজেলার কয়েক হাজার পরিবারর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। আগে শীত আসলেই লালপুরের প্রায় প্রতিটি পরিবারের দেখা যেতে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরী হচ্ছে। নতুন খেজুরের গুড় আর নতুন ধানের চাল দিয়ে শুরু হতো নবান্নের উৎসব।

তাছাড়াও শীতের সকালে সুমৃষ্ট খেজুরের রস কেনা পছন্ধ করে। তবে কোনপ্রকার সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এবং খেজুর গুড়ের নামে ভেজাল গুড় তৈরী হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। আর এই সুযোগকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় তৈরী করছে ভেজাল খেজুরের গুড়। তবে ভেজাল প্রতিরোধ ও গুড় শিল্প রক্ষায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খেজুরের গুড় পুনরায় ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য এমনটিই মনে করেন এলাকাবাসী।

নভেম্বর ২৩, ২০১৯ at ১০:৫১:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এটি/এআই