ফানুস ওড়ানো ইসলামে যায়েজ কী না?

ধর্মীয় অনুষঙ্গ হিসেবে ভিন্নধর্মী লোকদের জন্য ফানুস ওড়ানোর অধিকার আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, কিছু কিছু দেশের মুসলমানও পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানাতে ফানুসের ব্যবহার করে। এ বছর বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের রমজান উদ্‌যাপনসংক্রান্ত বিবিসির করা একটি ফিচারে দেখা যায়, ইউরোপের বোসনিয়ায় মুসলমানরা ফানুস উড়িয়ে রমজানকে স্বাগত জানাচ্ছে।অথচ হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে অনুসরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)। অর্থাৎ তার হাশরও সেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে হবে।

একসময় হয়তো তারাও শখের বসে ফানুস ওড়াত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তা এখন পবিত্র রমজানের মতো এটি ধর্মীয় বিষয়েও অনুপ্রবেশ করেছে। এভাবে যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের ধর্মীয় রীতিনীতিতে বিদআত ও শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটছে।

ধর্মাচারে ফানুস
এখন এই বায়ু বেলুনগুলো ব্যবহার হয় বিভিন্ন ধর্মের পূজা উপলক্ষে। বৌদ্ধধর্মের সংবাদমাধ্যম ‘নির্ভানা পিসে’ এ ব্যাপারে একটি প্রবন্ধ আছে। সেখানে তারা লিখেছে, ‘স্বর্গের দেবতারা দেবরাজ ইন্দ্র কর্তৃক স্থাপিত চুলামণি জাদিকে এখনো পূজা করেন বিধায় আমরাও প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ফানুস উড়িয়ে পূজা করি। ফানুস ওড়ানোর অর্থ ওই চুলামণি জাদির পূজা করা। প্রদীপপূজা করা। আমরা বুদ্ধকে প্রদীপপূজা করতে পারি খুব সহজেই, কিন্তু স্বর্গের চুলামণি জাদির উদ্দেশে ফানুস উড়িয়ে আকাশে তুলে পূজা করি।

ফানুসের উৎপত্তি
কারো কারো মতে ফানুসের প্রথম আবিষ্কারক ঋষি এবং সামরিক কৌশলবিদ ঝুঝ লিয়াং (১৮১-২৩৪ খ্রি.)। যাঁকে শ্রদ্ধাস্বরূপ কংমিং নামে ডাকা হতো। জনশ্রুতি আছে যে শত্রুরা যখন তাঁকে ঘিরে ফেলেছিল, তখন তিনি ফানুসের গায়ে বার্তা লিখে সাহায্য চেয়েছিলেন। এই কারণে চীনে এগুলো এখনো ‘কংমিং দেং’ নামে পরিচিত। এই নামটির আরেকটি প্রস্তাবিত উৎস হলো এই ফানুসের সঙ্গে কংমিংয়ের পরিধানকৃত টুপির সঙ্গে মিল থাকায় এর নাম কংমিং লণ্ঠন বলা হয়।

সিনোলজিস্ট ও বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ জোসেফ নিধামের মতে, ফানুস আবিষ্কার হয় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে। সে সময় চীনের সৈন্যরা যুদ্ধের সময় সংকেত প্রদানের জন্য ছোট ছোট উষ্ণ বায়ু বেলুন নিয়ে পরীক্ষা করেছিল।

তাইওয়ানের নিউ তাইপেই সিটির পিংজি জেলায় একটি বার্ষিক ফানুস উৎসব পালন করা হয়। এতে লোকেরা ফানুসের গায়ে তাদের মনের ইচ্ছা ও শুভেচ্ছা লিখে ঈশ্বরকে বার্তা পাঠায়। ভারতে বড়দিনে স্টার অব বেথলেহেমের প্রতীক হিসেবে, আকাশে ফানুস ওড়ানো হয় যা নতুন বছরের প্রত্যাশা নিয়ে আসে।

তা ছাড়া এই জিনিসটি বিপজ্জনক হওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। ২০১৩ সালের ১ জুলাই ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে সেখানকার সব থেকে বড় অগ্নিকাণ্ডে এক লাখ টন পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান পুড়ে যায় এবং আনুমানিক ছয় মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। স্মেথউইকের একটি প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং প্লান্টে জ্বলন্ত ফানুস এসে পড়ায় এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, পাউন্ডল্যান্ড ফানুস বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০১৩ সালের ৬ জুলাই তাদের সব মজুদ সরিয়ে নেয়।

ফানুস বিপজ্জনক হওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। ২০১৩ সালের ১ জুলাই ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে এক লাখ টন পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান পুড়ে যায় এবং আনুমানিক ছয় মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়

২০১৮ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরের কাছে রিওসেন্ট্রো কনভেনশন সেন্টারের একটি প্যাভিলিয়নের ছাদে জ্বলন্ত ফানুস এসে পড়ায় প্যাভিলিয়নটি সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, চীন ও সানিয়া শহরে বিমান চালনা ও আকাশসীমা বিঘ্নিত হওয়ায় ফানুস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (সূত্র : টেলিগ্রাফ)।

আরো পড়ুন :
সিনেমা পর্দায় অভিষেক শাহরুখ কন্যার
মুসল্লীকে অপহরণ করে পুরুষাঙ্গ কেটে নিল দুর্বৃত্তরা

আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, স্পেন এবং ভিয়েতনামেও ফানুস ওড়ানো অবৈধ। ১৯৯৮ সাল থেকে ব্রাজিলে ফানুস ওড়ানো একটি পরিবেশগত অপরাধ, যার ফলে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

তাই রাষ্ট্রীয় আইনকে সম্মান জানিয়ে হলেও আমাদের ফানুস ওড়ানো বর্জন করা উচিত। ইচ্ছাগুলো আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে কিংবা উম্মাহর শান্তি কামনা করে কোনো কৃত্রিম আলোকবর্তিকা আকাশে ওড়ানোর প্রয়োজন হয় না। পবিত্র কোরআনই আমাদের আলোকবর্তিকা। মহান আল্লাহ বলেন, এ কোরআন মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমত। (সুরা : জাছিয়া, আয়াত : ২০)

১৯ নভেম্বর, ২০১৯  at ১০:৪২:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/কাক/এজে