হুন্ডি ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ, শত কোটি টাকার মালিক!

কোটচাঁদপুরের এক সময়ের কসাই এখন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর শহরের কসাই খালেক নামে পরিচিত আব্দুল খালেক এখন শত কোটি টাকার মালিক। হয়েছেন একজন বড় মাপের ব্যবসায়ী। পুত্রের নামে গড়েছেন পেট্রোল পাম্প, স্থাপন করেছেন কাঠের স’মিল, তৈরী করেছেন বিলাশ বহুল আলিশান বাড়ি, আছে বহু গাড়ি। অভিযোগ আছে হুন্ডি ও মাদক ব্যবসার মত অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা। কসাই কাজের শুরুটা হয়েছিল বাবার হাত ধরেই, সেই কসাই ব্যবসা থেকে আব্দুল খালেক এখন শত কোটি টাকার মালিক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বেনেপাড়ার বাসিন্দা ফকির বিশ্বাসের ছেলে আব্দুল খালেক। বাবার কাছেই কসাইয়ের কাজের হাতেখড়ি। ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি কোটচাঁদপুর বাজারে বাবার সাথে ছাগল জবাইয়ের কাজ শুরু করেন। অন্যান্য ভাইয়েরা এ পেশায় জড়িত থাকলেও তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। অন্যদিকে ব্যবসা লাভজনক না হওয়ায় প্রায় ২ যুগ পূর্বে কসাইয়ের কাজ ছেড়ে দেন খালেক। শুরু করেন কাঠের ব্যবসা।

গড়ে তোলেন বলুহর ষ্ট্যান্ড এলাকায় স’মিল। কাঠের ব্যবসার পাশা-পাশি শুরু করেন হার্ডওয়্যারের ব্যবসা।  পরবর্তীতে ২০০০ সালের পূর্বে ফারুক হোসেন কাজল পরিচালিত তৎকালিন হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়ান খালেক। শীর্ষ হুন্ডি এজেন্টদের তালিকায় নাম রয়েছে খালেকের । বর্তমানে তার শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার রহস্য’র পিছনে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

অবৈধ হুন্ডি ব্যবসাকে পুজি করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আব্দুল খালেক আজ সম্মানীয় ব্যবসায়ীদের নামের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এ ব্যবসা করেই তিনি তিনটি ট্রাক্টরসহ ১৫টি ট্রাক গাড়ি, নিজ মহল্লায় জমি ক্রয় করে গড়েছেন বিলাশ বহুল আলিশান বাড়ি , কোটি টাকার জমি ক্রয়সহ শহরের বলুহর ষ্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী জনবহুল এলাকায় জমি ক্রয়ের মাধ্যমে স্থাপন করেছেন কোটচাঁদপুরের সবচেয়ে বেশি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন “টোটন ফিলিং স্টেশন” নামে পেট্রোল পাম্প। এক সময়ের কসাই খালেক নানা ব্যবসার অন্তরালে মাদকের ব্যবসাটাও চুটিয়ে করছেন কিনা তা নিয়েও সাধারণ জনগণের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট ধোয়াশা।

এরই মধ্যে এলাকায় চাওর হয়েছে আব্দুল খালেক বর্তমানে তার পুত্র শান্তি সিকদারের সহযোগিতায় ব্যবসার পাশা-পাশি অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ। গত ৮ অক্টোবর রাত আড়াই টার দিকে জীবননগর থানার শাহপুর ক্যাম্পের এএসআই ইমামুল জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের সন্তোষপুর মোড়ে আব্দুল খালেকের মালিকানাধীন ট্রাকটিকে (ঢাকা-মেট্রো-ট-১৮-৪১৮৬) সিগন্যাল দেয়।

কিন্তু চালক সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুত গতিতে কোটচাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হন। প্রায় ২৫ কি.মি. পথ পেরিয়ে কোটচাঁদপুর পশুহাটের কাছে দ্রুত গতিতে আসা ট্রাকটি দূর্ঘটনার কবলে পড়েন। পরে জীবননগর পুলিশ কোটচাঁদপুর থানা পুলিশের সহায়তায় দূর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি থেকে ৪’শ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিল উদ্ধার করে। এসময় আটক করা হয় চালক ইমন (৩৫) ও হেলপার ফাহিম (১৭) কে। দূর্ঘটনায় চালক ইমন ট্রাকের কেবিনে আটকা পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে ট্রাকের সামনের অংশ কেটে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে কোটচাঁদপুর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামীদের জবানবন্দী গ্রহণ করেনি। এমনকি পুলিশ এ মামলায় গাড়ির মালিককেও অন্তর্ভূক্ত করেননি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জীবননগর থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম জানান, ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, দূর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে মালিক আব্দুল খালেক গ্যারেজে মেরামত করছেন। এ মামলায় জীবননগর থানা এলাকা নতুন পাড়ার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ছোট খোকা ও তার দু’পুত্র আনারুল এবং একরামুল, ট্রাক চালক ইমন ও হেলপার ফাহিমের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়।

মামলা নং-৩১, তারিখঃ ২৩-০৯-১৯। ইতোমধ্যেই ট্রাকের মালিক খালেকের তদবীরে চালক ও হেলপার জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাওর হয় কসাই আব্দুল খালেকের নির্দেশেই ট্রাকটির চালক ও হেলপার রাতের অন্ধকারে অবৈধ ভারতীয় ফেন্সিডিল বহন করে নিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি পুলিশ ও কিছু অসাধু সাংবাদিকদের টাকার বিনিময়ে ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে কসাই খালেকের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের কথা।

আরো পড়ুন :
হাইস্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় !
জমি সংক্রান্ত জেরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি কোর প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার মালিকানাধীন পেট্রোল পাম্প থেকে দেদারসে খোলা পেট্রোল,অকটেন বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।

এক্ষেত্রে তিনি সরকারি কোন নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছেন না। জনমনে প্রশ্ন! কিভাবে একজন ছাগল জবাইয়ের কসাই রাতা-রাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে শত কোটির মালিক হতে পারে। এক সময়ের কসাই খালেক নানা ব্যবসার অন্তরালে মাদকের ব্যবসাটাও গোপনে করছেন কিনা তা নিয়েও সাধারণ জনগণের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট ধোয়াশা।

বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও দূর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সূধি সমাজ ও সাধারণ মানুষ। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, অভিযুক্ত আব্দুল খালেক এই প্রতিবেদককে কোন কিছুই পরিস্কার করে জানাতে পারেননি।

১৭ নভেম্বর, ২০১৯  at ২২:০৪:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসএমরা/এজে