লালপুরে রোপা আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দাম নিয়ে হতাশা!

হেমন্তের মাঝে নাটোরের লালপুর উপজেলা জুড়ে শুরু হয়েছে সোনালী রোপা আমন ধান কাটা। রোপা আমন ধান কাটা ও ঘরে তোলায় এখন দারুন ব্যাস্ত এই অঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলের আশা করছেন কৃষকরা তবে ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশায় রয়েছেন তারা।

 

আরো পড়ুন:
বেনাপোল সীমান্ত থেকে ৫০লক্ষ টাকা মূল্যের মাদক জব্দ করেছে বিজিবি
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনি পরীক্ষার্থীদের জন্য রইল শুভ কামনা

 

সরেজমিনে লালপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেলো, মাঠে মাঠে দুলছে সোনালী ধান। ইতি মধ্যে কিছু কিছু জমিতে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করছেন কৃষকরা। মাড়াই করা ধান গোলায় তোলায় পুরুষের পাশাপাশি ব্যাস্ত নারীরাও।সব মিলিয়ে এই উপজেলার কৃষকদের যেন দোম নেওয়ার ফুরসুত টুকু নেই। তার পরেও তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ধানচাষী হাসিবুল ইসলাম, আশরাফ, আমির হোসেন, আকমল হোসেন বলেন, ‘এবছর ধান রোপনের সময় অনাবৃষ্টি ও ধানের যখন শীষ বের হলো ঠিক তখন অতিবৃষ্টি হয়ে বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। তার পরেও আল্লাহর অশেষ রহমতে শেষ পর্যন্ত ধানের ভালো ফলন হবে বলে আশ করছি। কিন্তু ধান ভালো হলেও লাভ নেই, করন যে টাকা খরচ করে ধান চাষ করেছি বর্তমানে বাজারে ধানের যে দাম তাতে জমির ধান বিক্রয় করে খরচের টাকাও উঠবেনা।

তারা আরো বলেন,‘গত কয়েক বছর ধরে আমরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছিনা ফলে আমরা ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এইবার ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে বিগত দিনের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে ভেবে ধান চাষ করেছিলাম কিন্তু এই বারও মনে হয় ধানের ন্যায্য মূল পাবোনা। সরকার তো এইবছর প্রতি কেজি আমন ধানের মূল্য ২৬ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে তার পরেও কি আপনাদের ক্ষতি হবে জানতে চাইলে.? তারা বলেন,‘ঐ মূল্য সরকারী খাতা কলমেই থাকে আমরা পাই না।

বাজারে বিক্রয় করতে গেলে ধানের দাম কম বলে আড়ৎদাররা নিতে চাইনা। সরকার তো আর আমাদের কাছ থেকে ধান কিনে না। তারা বলেন,‘সরকার কৃষকের নিকট থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয়করলে কৃষকরা উৎপাদিত ধান বিক্রয় করে লাভবান হবে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে,‘চলতি মৌসুমে লালপুর উপজেলায় ৫হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন কারা হলেও চাষ হয়েছে ৭হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ২হাজার হেক্টর বেশি। এই সকল জমি থেকে প্রায় ৩৩হাজার ৭৫ মেট্রিকটন ধান ও ২২হাজার ৫০ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্রার চেয়ে ২হাজার হেক্টর অধিক জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। প্রকৃতিক বিপর্যয়ের পরেও রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা উৎপাদিত ধানের সঠিক দাম পেলে ধান বিক্রয় করে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।

লালপুর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন,‘সরকারী ভাবে লালপুর উপজেলায় কত টন ধান ক্রয় করা হবে আমরা এখনো তার চিঠি পাই নাই। চিঠি পেলে বলা যাবে। সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষকরা সেই মূল্যে তাদের ধান বিক্রয় করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘কৃষি অফিসের মাধ্যমে লালপুর উপজেলায় উৎপাদিত ধানের লক্ষমাত্রা সরকারের নিকট পাঠিয়েছি। সরকারী লক্ষমাত্রা অনুযায়ী কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয় করা হবে বলে তিনি জানান ।

উল্লেখ্য,‘আমন মৌসুমে সরকার সারা দেশে কৃষকদের নিকট থেকে মোট ৬লক্ষ মেট্রিকটন ধান ও লাইসেন্সধারী মিল থেকে সারে ৩লক্ষ মেট্রিকটন সেদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার মেট্রিকটন আতব চাল ক্রয় করবে।

১৬ নভেম্বর, ২০১৯  at ১৮:১২:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/আরটু/এফএপি