যশোর আ.লীগের দুই ইউনিটের সম্মেলন, নতুন নেতৃত্ব হবে ইলেকশন নাকি সিলেকশনে?

আজ যশোর সদর উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘদিন পর এই দুই ইউনিটের সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসতে অন্তত ১০ নেতা মাঠে নেমেছেন। যারা কাউন্সিলরদের মতো সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি করছেন। এজন্য তারা গত দুই সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাউন্সিলরদের বাড়ি বাড়ি যান।

জানা যায়, যশোর ঈদগাহ ময়দানে এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও সদস্য এসএম কামাল হোসেন। এছাড়া প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য। আর সম্মেলন উদ্বোধন করবেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন।

সম্মেলনকে সামনে রেখে যশোর সদর উপজেলায় ৫৪৬ জন ও শহর আওয়ামী লীগের ২৫২ জনকে কাউন্সিলর করা হয়েছে। এই কাউন্সিলরদের তালিকা ইউনিট প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আজ নেতৃত্ব নির্বাচনে এই কাউন্সিলররাই ভোট দেবেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। সভাপতি পদে প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মিন্টু ও জেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মতলেব বাবু। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শাহারুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু তালেব ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিমুজ্জামান মিলন।

আর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন ও শহর শাখার সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফিরোজ খান এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লুৎফুর কবির বিজু প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম আজাহার হোসেন স্বপনও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন।

এদিকে, এই দুই ইউনিটের সম্মেলনকে সামনে রেখে যশোরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বইছে। যারা সম্মেলনের দিন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব চান। শহরের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর লোকমান হোসেন বলেন, ‘সম্মেলন ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উৎসবের মধ্যে আছে। আমরা চাই সৎ, যোগ্য ও কর্মীবান্ধব নেতারা নেতৃত্বে আসুক। এজন্য কাউন্সিলে আমরা সরাসরি ভোট দিতে চাই।’ শহর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী শহিদুল হক শাহিনও জানালেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে আমরা কাউন্সিলররা সরাসরি ভোট চাই।’

আরো পড়ুন:
ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন গাম্বিয়া

যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী মোহিত কুমার নাথ বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে এসেছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্বে ছিলাম। দলের সংকটকালে রাজপথে থেকেছি। জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এবার তৃণমূলের দাবি অনুযায়ী প্রার্থী হয়েছি। আমরা চাই তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন হোক।’

আরেক সভাপতি প্রার্থী মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, ‘দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে তৃণমূলকে সাথে নিয়ে রাজপথে আছি। দলকে সংগঠিত করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড মানুষের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছি। সম্মেলনকে সামনে রেখে কাউন্সিলরদের কাছে গিয়েছি। সাড়াও পেয়েছি। তাই আমি ভোট চাই।’

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শাহারুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় উপজেলার ২৫৭টি গ্রামে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মী, ভোটার, সমর্থক সবাই উচ্ছ্বসিত। তারা সবাই ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি চান। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব তৈরির জন্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কমিটি হওয়া উচিত। তাহলে এটা প্রমাণ হবে নেতার সাথে ড্রইংরুমে বসে থাকলে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া যায় না।

এজন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে থাকতে হয়। ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আছি। বিএনপি-জামায়াতের ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ১৪ বার ও ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ২১ বার কারাবরণ করেছি। ওয়ান ইলেভেনের সময় নেত্রীর মুক্তির জন্য ব্যাগের মধ্যে থেকে ব্যানার বের করে মানববন্ধন-মিছিল করেছি। তৃণমূলের নেতারা তা জানেন। তাই আমি আশাবাদি কাউন্সিলররা আমাকে মূল্যায়ন করবেন। আর তা হলে নিজের স্বার্থে নয়, দলের প্রয়োজনে যা যা করণীয় আমি সব করবো।’

আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলিমুজ্জামান মিলন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগকে স্বচ্ছ ও সাধারণ মানুষের দলে রূপান্তরের জন্য শিক্ষিত, যোগ্য নেতাদের দায়িত্ব দিতে যাচ্ছেন। আমি আশা করবো, আজকের সম্মেলনে সৎ ও যোগ্য নেতারাই দায়িত্ব পাবেন।’

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অপর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শেখ আব্দুল মতলেব বাবু ও আবু তালেবও চান কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক।

শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। বিএনপি-জামায়াতের দুশাসনের সময় রাজপথে থেকেছি। আর এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে তৃণমূলের নেতকার্মীদের সাথে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে আর আদর্শ নিয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছি। আশা করি এই সম্মেলনে তার ফল পাবো। তৃণমূলের নেতারা ভোট চাই। তাদের সাথে সুরমিলিয়ে আমিও চাই ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক।’

আরেক সভাপতি প্রার্থী কামাল হোসেন বলেন, ‘দুই যুগের বেশি সময় ধরে শহর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাজপথে আছি। সম্মেলনকে সামনে রেখে কাউন্সিলরদের সাথে যোগাযোগ করেছি। ওয়ার্ডের অনেক নেতা আমার পক্ষে কাজ করছেন। আশা করি ভাল ফলাফল পাবো।’

আর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাহমুদ হাসান বিপু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছি। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাজপথে ছিলাম। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুশাসনে নির্যাতিত হয়েছি। কারাবরণ করেছি। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের ‘আগুন সন্ত্রাস’ আমরা রাজপথে থেকে মোকাবেলা করেছি। রাজপথের সাথি নেতাকর্মীদের ভালোবাসি। আমি বিশ্বাস করি তারা আমাকে ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী করবেন।’

শহরের আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী লুৎফুর কবির বিজু বলেন, দীর্ঘদিন রাজপথে আছি। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। দলে অনুপ্রবেশকারীরা আমার এক ভাইকে হত্যা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়নে রাজপথে আছি। দায়িত্ব পেলে যশোর শহর আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত একটি শক্তিশালী সংগঠনে রূপান্তরে কাজ করবো।

নভেম্বর ১৬, ২০১৯ at ১২:৪৯:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/সক/এএএম