দুই নারীকে ভারতে বিক্রি ও পতিতাবৃত্তির অভিযোগে দম্পতি আটক

ভারতের বাসা বাড়িতে ভাল বেতনে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে দুই নারীকে পাচার করে জোরপূর্বক কিডনি নেওয়া ও পতিতাবৃত্তির অভিযোগে এক দম্পতিকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর পুলিশ সুপারে কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।

আটককৃত দম্পতি হচ্ছে, যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি জামরুলতলার হালিম মোল্যার স্ত্রী আরিফা আক্তার ওরফে পপি ও শেখহাটি পশ্চিম পাড়ার মৃত মেহের আলীর ছেলে ও পপির স্বামী হালিম মোল্যা। এ সময় তাদের অপর আসামী চাঁচড়া মোড়ের মোক্তারের স্ত্রী সীমা সাহাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, যশোর সদর উপজেলা শেখহাটি পশ্চিম পাড়ার আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী মাছুরা বেগম ও শেখহাটি জামরুল তলার মজিদ মোল্যার মেয়ে জোসৎনা বেগমকে ভারতে ভাল বেতনে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আরিফা আক্তার পপি দু’জনের কাছ থেকে ২৯ হাজার টাকা গ্রহন করে।

পরবর্তীতে তাদেরকে গত ৮ মার্চ সকাল ৯ টায় পপি বেগম দুই নারীকে তার বাড়িতে ডাকে। তারা আসার পর তাদেরকে চাঁচড়া মোড় থেকে পুটখালী সিমান্তে নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়ে পপি চলে আসে। উক্ত ব্যক্তি তাদেরকে ভারতের পাল্লা নামকস্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে একদিন রেখে ট্রেনযোগে তাদের দু’জনকে বেঙ্গালোরে সীমা সাহার ভাড়াটিয়া ৪র্থ তলা বাড়িতে নিয়ে যায়।

উক্ত বাড়িতে ৪০/৪৫ জন বাংলাদেশী বিভিন্ন বয়সের নারী অবস্থান করছে বলে মাছুরা পুলিশকে জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, সীমা সাহা পপির মাধ্যমে বাংলাদেশী বিভিন্ন বয়সের নারীদের বাসা বাড়িসহ বিভিন্ন কাজের কথা বলে উক্ত বাড়িতে তোলেন।

আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরায় ইউএনওর ৯টি ওয়ার্ডে কাজ অব্যহত
দৌলতপুরে বিশ্ব ডায়বেটিস দিবস উদযাপন

মাছুরা বেগমকে পার্লারে ফেসিয়াল এর কথা বলে ১৭ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সীমা সাহা ভারতের জেপি নগর নামকস্থানে এক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সীমা সাহা মাছুরাকে বলে তার মুখের ফেসিয়ালসহ অন্যান্য সমস্যার চিকিৎসা করবে বলে জানায়। ওই দিন সকাল ১০ টায় এক ব্যক্তি মাছুরাকে অজ্ঞান করে ডান বাহু হইতে মাংস কেটে মুখে কসমেটিক ও পেটের অপারেশন। অপারেশনের পর মাছুরার সন্ধ্যায় জ্ঞান ফিরলে তার শরীরে এই অবস্থার কথা সীমা সাহার কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাকে মারপিট পূর্বক একটি কক্ষে আটক করে রাখে।

অপরদিকে, ২৭ এপ্রিল সীমা সাহা জোৎসার কক্ষে ১০/১৫ জন লোক দিয়ে জোর পূর্বক পতিতাবৃত্তি করায়। জোৎসা বিষয়টি মাছুরার কাছে জানায়। এদিকে মাছুরা বেগম আরো জানান, গত ৫ মে সীমা সাহা মাছুরা ঘরে এক বয়স্ক লোককে পাঠালে মাছুরা তাকে লাথি মারে।

এতে সীমা সাহা ক্ষিপ্ত হয়ে মাছুরা বেগম ও জোৎসাকে বলে তাদের দু’জনকে পপি’র মাধ্যমে ২লাখ টাকার বিনিময়ে কিনেছে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে ঘটনার পর দেড় মাস পরে মাছুরা বেগম ও জোৎনা সেখানে অবস্থানরহ বাংলাদেশী রাজু নামে এক যুবকের স্মরনাপন্ন হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে।

বাংলাদেশে আসার পর আরিফা আক্তার ওরফে পপি বেগম ও তার স্বামী হালিম মোল্যার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা হুমকী ধামকী দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।পরে উক্ত দুই নারী যশোরের একটি এনজিও’র স্মরনাপ্ন্য হলে উক্ত এনজিও’র মাধ্যমে পুলিশের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

কোতয়ালি পুলিশের একটি টিম পপি বেগম ও তার স্বামী হালিম মোল্যাকে আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

নভেম্বর ১৫, ২০১৯ at ০০:১২:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এএএম