ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সাতজনই হবিগঞ্জের জেলার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সাতজনই হবিগঞ্জের। মৃত্যুর খবরে নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন হবিগঞ্জ শহরতলীর বড় বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের ছেলে ইয়াছিন আলম, আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা জেলা ছাত্রদল সহ-সভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফ, বানিয়াচং উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়ার আড়াই বছরের মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা, একই উপজেলার মদনমুরত গ্রামের আল-আমিন, চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের পশ্চিম তালুকদার বাড়ির ফটিক মিয়া তালুকদারের ছেলে রুবেল মিয়া তালুকদার (২৫), একই উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (৩০), একই উপজেলার আহমদাবাদ গ্রামের পেয়ারা বেগম (৬৫)।

নিহত আল-আমিনের চাচা বানিয়াচংয়ের বড়ইউড়ি ইপির সাবেক মেম্বার কুতুব উদ্দিন জানান, তার ভাতিজা চট্টগ্রামে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতো। ১৯ দিন আগে তার এক ছেলের জন্ম হয়। ছেলের নাম রাখতে সম্প্রতি বাড়িতে আসে। একমাত্র ছেলের নাম রাখেন ইয়ামিন। তার রনিহা (৬) ও নুছরা (৮) নামে দু’টি মেয়ে রয়েছে। ছেলের নাম রেখে চাচা মনু মিয়া ও ফুফাতো ভাই শামীমকে নিয়ে সোমবার রাতে উদয়ন ট্রেনে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় রেল দুর্ঘটনায় মারা যায়। অপর দুইজন মনু মিয়া ও শামীম গুরুতর আহত হয়। আল-আমিনের কোনো ভাই-বোন নেই। অনেক আগেই মারা গেছেন মা-বাবাও।

বানিয়াচং উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়া জানান, তিনি ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম চট্টগ্রামের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বৃহস্পতিবার তারা বাড়ি আসেন। সোমবার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় আড়াই বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা মারা যায়। আহত হন তিনি, তার স্ত্রী ও সাড়ে ৪ বছর বয়সী ছেলে নাছির। তারা এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন। মেয়ের মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে পড়েছেন সোহার মা-বাবা।

শহরের আনোয়ারপুর গ্রামের আব্দুল আহাদ জানান, তার চাচাতো ভাই আলী মোহাম্মদ ইউসুফ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী চিশতিয়া বেগম চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী ও দেড় বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে ইশা আক্তারকে বাড়িতে আনার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

আরো পড়ুন:
রাজশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ
সুনামগঞ্জে ভুয়া র‌্যাব সদস্যকে আটক 

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরী জানান, নিহত আলী মোহাম্মদ ইউসুফ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি ৪ চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা মারা গেছেন ২০১১ সালে। আর বড় ভাই উসমান গনি ২০১৭ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এখন ইউসুফই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।

বা থেকে আদিবা, ইউসুফ, সুজন, রুবেল

ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে শহরতলীর বড়বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের ছেলে ইয়াছিন আলম (১১)। বাবার সাথে সে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল সাগর ও দর্শনীয় স্থান দেখতে। ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হন তার বাবা পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর আলম। নিহত ইয়াছিন স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সে স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ছিল। ছেলেকে হারিয়ে তার মা হাসিনা আক্তার বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।

বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের রুবেল মিয়া তালুকদার। সে ওই গ্রামের পশ্চিম তালুকার বাড়ির ফটিক মিয়া তালুকদারের ছেলে। সে স্থানীয় শানখলা মাদ্রাসার দাখিল শ্রেণীর ছাত্র। ট্রেন দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারসহ পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

একই উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের সুজন মিয়া চাকরির ইন্টারভিউ দিতে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। নিহত সুজন হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে অনার্সের ছাত্র। পাশাপাশি হবিগঞ্জ আদালতে মোহরার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ওই গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে। চার ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।

চুনারুঘাট উপজেলার আহমদাবাদ ইউনিয়নের ছয়শ্রী গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী পেয়ারা বেগম সোমবার রাতে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। একাই তিনি বাড়ি থেকে রওয়ানা হন। পথে উদয়ন ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান। তার ৪ সন্তান রয়েছে। খবর পেয়ে সকালে তার স্বামী আব্দুস সালাম লাশ আনতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যান। এ বিষয়টি জানিয়েছেন আহমদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত চৌধুরী।

নভেম্বর ১২, ২০১৯ at ২০:৪২:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/এএএম