বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের বন্ধুর লাশ উদ্ধার!

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে জলমহালে নৌকা ডুবির পর বাবুল মিয়া (৩৫) নামে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির ছেলের বন্ধুর লাশ বাড়ি হতে উদ্ধার করেছে পুলিশ!

এর পূর্বে উপজেলার উওর কামলাবাজ গ্রামে নিহতের বসতবাড়ি হতে সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। নিহত বাবুল উপজেলার উওর কামলাবাজ গ্রামের হাজি ময়না মিয়ার ছেলে। তিনি স্ত্রী ছাড়াও শিশু সন্তান ও এক শিশু কন্যার জনক।

মঙ্গলবার জামালগঞ্জ থানার ওসি মো.সাইফুল আলম বাবুলের লাশ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেন। নিহতের পারিবারীক সুত্র জানায়, উপজেলার হরিপুর মৎসজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারাপ্রাপ্ত সুন্দরপুর গ্রুপ জলমহালের ভোগ দখলে থাকা প্রভাবশারীদের প্ররোচনায় সোমবার ভোররাতে থানা পুলিশকে না জানিয়ে জলমহাল হতে তরিগড়ি করে নিহত বাবুলের লাশ দাফনের জন্য তার নিজ বাড়ি উপজেলার উওর কামলাবাজ গ্রামে নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রভাবশালী মহলের ভোগদখলে থাকা সুন্দরপুর গ্রুপ জলমহালে রবিবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীমের ছেলে রেজওয়ান মোহাম্মদ সাদী ওরফে বাবুর সাথে রবিবার রাতে সুন্দরপুর গ্রুপ জলমহালে বাবুলসহ ৭জন একই নৌকায় পাহাড়ায় ছিলেন।

ঘটনার রাতে বাবুলের সাথে থাকা অন্যান্যরা থানা পুলিশ ও নিহতের পরিবারকে জানায়, জলমহালে নৌকায় করে টহলকালীন সময়ে রবিবার রাত ১১টা হতে সাড়ে ১১টার ভেতর হালকা বাতাসে নৌকা ডুবে গেলে তারা ৬ জন সাঁতরে তীরে উঠলেও বাবুল নিখোঁজ হয়ে যান।

এরপর সাঁতরে তীরে উঠেন ৬ জন রাত দেড়টার দিকে বাবুলের পরিবারে নৌকা ডুবির খবর জানানো হয়।, ফজরের আজানের পর বাবুলের গ্রাম থেকে পরিবার ও স্বজনরা জলমহালে গিয়ে জাল ফেলে লাশ উদ্ধার করেন। এরপর জলমহালের ভোগদখলে থাকারাই লাশ দ্রুত বাড়ি নিয়ে যেয়ে দাফনের জন্য নানা অদৃশ্য চাঁপ তৈরী করেন।

এক পর্যায়ে জলমহালের প্রভাবশালী মহল নিহতের পরিবারকে কিছুটা ম্যানেজ করে থানা পুলিশকে না জানিয়ে কোন রকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের চেষ্টা চালায় কিন্তু পুলিশের দায়িত্বশীলরা তাতে বাঁধ সাঁধলে যত বিপক্তি ঘটে।

থানা পুলিশ নিহতের বাড়ি গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর বেলা সোয়া ১১টায় লাশ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় জানা গেছে,  জলমহালটি স্থানীয় হরিপুর মৎসজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নিলেও পরোক্ষভাবে জলমহাল ভোগ ও শাসনে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি জামালগঞ্জের সাচনা বাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীমের ছেলে রেজওয়ান মোহাম্মদ সাদী ওরফে বাবু ও তার সহোদর ভাই পারভেজ সহ আরো কয়েক প্রভাবশালী।

সোমবার রাতে নিহত বাবুলের বড় ভাই উপজেলার উওর কামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়া তার ভাই বাবুলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ভাই ঘটনার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম শামীমের ছেলে বাবু তার সাথে জলমহালে থাকার জন্য নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, জলমহালে নৌকা ডুবির ঘটনা রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার ভেতর ঘটে থাকলেও আমাদের পরিবারকে রাত ১টার দিকে জানানো হয়। আমি ওই রাতে জলমহালে আমার ভাইয়ের সাথে থাকা বাবু ও ভজন তালুকদার ছাড়া অন্যদের চিনিও, এছাড়াও সেখানে আদৌ নৌকা ডুবির ঘটনা কীভাবে ঘটেছে তাও আপাতত আমি বা আমাদের পরিবারের কেউ বোধগম্য নই , তারপরও দেখি পুলিশের তদন্তে কী হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলে রেজওয়ান মোহাম্মদ সাদী ওরফে বাবু সুন্দরপুর গ্রুপ জলমহালের অংশীদার এবং নিহত বাবুল আমার ছেলের বন্ধু ছিলেন।

আরে পড়ুন :
মা হয়েছে পাগলী, বাবা হয়নি কেউ
সুনামগঞ্জে মাদক কারবারীসহ পাঁচ আসামী কারাগারে

জামালগঞ্জ থানার এসআই মোশারফ হোসেন লাশ মর্গে প্রেরণের তথ্য জানিয়ে বলেন, জলমহালে রবিবার রাতে বাবুলের সাথে বাবু,ভজন তালুকদার, নিত্য রায়, টুকু মানিক, শিপলু ও সামছু সহ ৭ জন ছিলেন।

১২ নভেম্বর, ২০১৯  at ১৬:২৩:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/দেপ্র/এজে