অন্যের স্ত্রীকে জোরপূর্বক বিয়ে করলেন উল্লাপাড়ার মেয়র নজরুল ইসলাম

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রাজন আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী গুলশানারা পারভীন পান্না নামের এক সহকারী শিক্ষিকাকে জোরপূর্বক ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন উল্লাপাড়া পৌর মেয়র আ.লীগ নেতা এস. এম নজরুল ইসলাম। মেয়রের প্রভাবে ভয়ে মামলা-মোকদ্দমা তো দূরের থাক আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগ পর্যন্ত দেয়নি বলে রোববার সকালে সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন গুলশানারার স্বামী ব্যবসায়ী রাজন আহমেদ।

এ বিতর্কিত ঘটনায় উল্লাপাড়া পৌর এলাকার সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইলেও সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে হ্যানিমুনও করেন মেয়র নজরুল। হ্যানিমুন থেকে ঘুরে এসে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পৌর এলাকার সকল প্রোগ্রামসহ নানা অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় স্ত্রী পান্নাকে নিয়ে যাতায়াত শুরু করেন মেয়র নজরুল। তবে পৌর মেয়রের দ্বিতীয় স্ত্রীর হ্যানিমুনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হবার পর সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

এদিকে মেয়র নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই স্কুলে অনিয়মিত আসছেন গুলশান পারভীন পান্না। একদিনের ছুটি নিয়ে স্কুল ছেড়ে এই দীর্ঘ সময় ধরে অনুপস্থিত তিনি। তবে স্কুলে না এলেও বেতন ঠিকই তুলে নিচ্ছেন পান্না। পৌর মেয়র স্ত্রী হওয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা মুখ খুলতে নারাজ।

অভিযোগে জানা যায়, উল্লাপাড়া পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম কয়েক বছর আগে পৌর এলাকার ঝিড়িকা বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সেই অনুষ্ঠানেই ১ সন্তানের জননী সহকারি শিক্ষিকা গুলশানারা পারভীন পান্নার প্রতি কু-দৃষ্টি পড়ে মেয়র নজরুল ইসলামের।

এরপর থেকেই বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় পান্নাকে। এক পর্যায়ে কোনভাবেই যখন গুলশান পারভীন রাজি হয়নি তখন ক্ষমতার দাপট ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রভাব দেখিয়ে উল্লাপাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজন আহমেদের স্ত্রী ১ সন্তানের মা গুলশানারা পারভীন পান্নাকে জোড়পূর্বক উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন এবং এ বিষয়ে কোন মামলা-মোকদ্দমা করলে রাজন ও তার সন্তানকে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।

মেয়র ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে গুলশানারা পারভীনের স্বামী রাজন স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে কোন মামলা ও শালিসও ডাকেননি। ১৬ বছর বয়সী সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজন কোন ঝামেলায় নিজেকে জড়াননি। এরপর থেকেই রাজনকে সবসময় চাপের মুখে রেখেছেন মেয়রের সন্ত্রাসী বাহিনী।

এ বিতর্কিত ঘটনায় উল্লাপাড়া পৌর এলাকার সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। পৌর এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দ্বিতীয় স্ত্রী পান্নাকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে হ্যানিমুন করেন মেয়র নজরুল ইসলাম। দ্বিতীয় স্ত্রীর হ্যানিমুনে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হবার পর সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। হ্যানিমুন থেকে এসেই স্ত্রীকে ক্লাসে না পাঠিয়ে সবসময় নিজের সঙ্গে রেখেই সকল প্রোগ্রামসহ নানা অনুষ্ঠানে স্ত্রী পান্নাকে নিয়ে যাতায়াত শুরু করেন মেয়র নজরুল ইসলাম।

পরবর্তীতে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখিয়ে ঝিড়িকা বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গুলশানারা পারভীনকে উল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করেন এবং স্ত্রীকে নজরবন্দিতে রাখেন মেয়র ও তার বাহিনী দিয়ে সবসময়।

গুলশানারা পারভীন পান্নার স্বামী ব্যবসায়ী রাজন আহমেদ রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে জানান, আমার দীর্ঘ ১৮ বছরের সংসার ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন মেয়র নজরুল ইসলাম। আমার সংসারে সাঈদ সামির রিয়াদ নামের একমাত্র সন্তান রয়েছে। রিয়াদ উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র।

তারপরও আমার স্ত্রীকে জোড়পূর্বক মেয়র সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছেন এবং হুমকি দিয়ে বলে গেছেন, এবিষয়ে মুখ খুললে আমাকে ও আমার সন্তানকে হত্যা করা হবে। আমার স্ত্রীকে জোড়পূর্র্বক বিয়ে করায় আমার মান-মর্যাদা সে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। আমার সন্তান স্কুলে মর্যাদা পায় না।

বহু কষ্টে জীবনযাপন করছি। তারপরও সবসময় মেয়রের লোকজন আমাকে নানা প্রকার চাপের মধ্যে রেখেছে। কোন অভিযোগ যেন কোথায় না করি করলেই আমাকে হত্যা করা হবে বলে ভয় দেখায়। তাদের ভয়ে আমি কোন ব্যবস্থা নেইনি। আমাকে মেয়র নজরুল যে ক্ষতি করেছে তার বিচার আল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি করবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হলে সকল আইনী ব্যবস্থা আমি গ্রহণ করবো। তাদের ভয়ে আমি সন্তানকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এ বিষয়ে রোববার সকালে উল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, গুলশানারা পারভীন (পান্না)’র ঝিড়িকা বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকতে মেয়র নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমার বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে আসেন। তবে স্কুল ফাঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, পৌর এলাকায় স্কুল, পৌর এলাকার মেয়রের স্ত্রী, ফাঁকি দিলে আমাদের কিছু করার থাকে না।

তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধি অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে পারে না। কারণ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন সকলের অভিভাবক।

অথচ সেই অভিভাবকই যদি অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন তাহলে সেই এলাকার জনগণ বিচার চাইবে কার কাছে। এই বিতর্কিত কর্মকা- সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারে না। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যদি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দেয় এবং তদন্তে অভিযোগটি প্রমাণিত হয় তাহলে সেই জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করতে পারে ‘জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব কর্তব্য আইন’র দ্বারাই।

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, গুলশানারা পারভীন পান্না আমার স্ত্রী। তবে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নভেম্বর ১০, ২০১৯ at ১৪:২৭:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এআর/এএএম